১ জুন, ২০২১ ১০:০৩

বৃষ্টি আতঙ্কে দিশাহারা চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম


বৃষ্টি আতঙ্কে দিশাহারা চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

বৃষ্টি আর জোয়ার আতঙ্কে রয়েছেন দেশের বৃহত্তর পাইকারি খাদ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। বর্ষা মৌসুমের প্রায় প্রতিটি পূর্ণিমা ও অমাবস্যার জোয়ারে তিন-চার বছর ধরে গোটা এই ব্যবসাপল্লী পানিতে তলিয়ে যায়। টানা তিন/চারদিন পানিতে সয়লাব হয়ে যায় বলে এখানে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য হয় না। ফলে এখানকার ব্যবসায়ীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পাশাপাশি কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তাদের। চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের গুদাম, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ে পানি। কেনাবেচা দূরের কথা, পণ্য বাঁচাতে সারা দিন পানি সেঁচেই দিন যায় অনেক ব্যবসায়ীর। খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জের প্রধান সড়ক দুটি প্রায় তিন-চার ফুট উঁচু করার পরও ভরা জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়ে যায় পুরো এলাকা। রাস্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অনেকে ইতিমধ্যে তাদের দোকানের ভিটি উঁচু করেও আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তত্ত্বাবধানে এবং সেনাবাহিনীর অধীনে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচটি খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ। যার কারণে পাঁচটি খালই এখন মূলত ময়লা-আবর্জনার স্তূপে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। বর্ষা মৌসুম দুয়ারে কড়া নাড়তে শুরু করলেও খালের মুখগুলো কখন উন্মুক্ত করা হবে তা নিয়ে নেই প্রকৃত কোনো তথ্য। ফলে এবার ব্যবসায়ী ও এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে বৃষ্টি ও জোয়ার আতঙ্ক আরও বেশি চেপে বসেছে বলে জানালেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ।

এদিকে বৃষ্টি না থাকলেও জোয়ারের পানিতে দিনের অর্ধেক সময়ই হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায় খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ের বেশিরভাগ সড়ক। এখানকার শুঁটকিপট্টি, ড্রামপট্টি, চালপট্টি, হামিদুল্লাহ খাঁ বাজার, খাতুনগঞ্জ-আসাদগঞ্জের প্রধান সড়কসহ এই এলাকার বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও অলিগলি। এতে কোনো কোনো গুদামে ভোগ্যপণ্য ভিজে একাকার হয়ে যায়। দিনভর আর কোনো ব্যবসা করতে পারেন না ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জ হামিদউল্লাহ খাঁ বাজারের কাঁচামালের আড়তদার রিতাপ উদ্দিন বাবু বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আগের ব্যবসায়িক ঐতিহ্য নেই। তার ওপর প্রতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্যে গত তিন-চার বছর ধরে আরও ধস নেমেছে। এর প্রভাব পড়ছে লেনদেনে। বিভিন্ন আড়তেও পানি ঢুকে পড়ে। ফলে ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ব্যবসায়ী নেতা ছৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, রাস্তা উঁচু করার পরও এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। দুই বছর আগে শুনেছিলাম কর্ণফুলী নদী থেকে যাতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পানি ঢুকতে না পারে সে জন্য ১১টি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে। সেই স্লুইস গেট এখনো নির্মাণ হয়নি। তাই কর্ণফুলী নদী থেকে  জোয়ারের পানি প্রবেশ করলেও তা স্বাভাবিক নিয়মে নামতে পারে না। এর খেসারত দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। বৃষ্টির সঙ্গে অমাবস্যাজনিত জোয়ার ও কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়া হলে হ্রদের পানিও যুক্ত হয়।

চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, গত বছরের চেয়ে বেশি জোয়ার আতঙ্কে রয়েছি আমরা। জোয়ারের পানি প্রতি বছর বছর বাড়ে। কিন্তু এবার প্রধান প্রধান খালের মুখগুলো স্লুইচ গেট নির্মাণজনিত কারণে অনেকটা বন্ধ রয়েছে। তাই আমরা সমস্যা সমাধান চাই দ্রুত। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস জানান, চাক্তাই খাল, রাজা খাল ও মহেশ খালসহ প্রধান প্রধান খালের মুখের স্লুইচ গেটের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। এখন কিছু কাজ বাকি আছে সেনাবাহিনী বাস্তবায়নাধীন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতাধীন খাল পাড়ে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের কাজ।রবিবার তাদের সঙ্গে বৈঠককালে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন করতে বলেছি। নইলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছবে বলে জানিয়েছি।

এদিকে নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, বন্দর নগরীর বিভিন্ন খালের মুখ স্লুইস গেট নির্মাণের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। ফলে জোয়ারের পানি যে গতিতে নগরীতে ঢুকছে, সেই একই গতিতে নেমে যেতে পারছে না। এমনকি এক জোয়ারের পানি নামতে নামতে আরেক জোয়ার শুরু হয়ে যায়। ফলে পানি নিমজ্জিত অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর