বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

চার্জশিটে বাদ নূর মোহাম্মদ

কোকেন মামলায় ফের তদন্ত দাবি

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত আমদানিকারক হিসেবে অভিযুক্ত কোকেন চোরাচালান মামলার আসামি সেই নূর মোহাম্মদকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ায় আপত্তি জানিয়ে আদালতে অধিকতর তদন্তের জন্য আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের নামে কোকেন জব্দের মামলায় চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের চার্জশিটে নূর মোহাম্মদকে বাদ দেওয়া হয়। গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. শাহে নূরের আদালতে নারাজি আবেদন দাখিলের পর এ বিষয়ে বিচারক ২৩ আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করেন।একই ঘটনায় র‌্যাব আলোচিত ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদের সম্পৃক্ততা পেলেও নগর গোয়েন্দা পুলিশ কেন পেল না সে বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফখরুদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মামলার নথিপত্র ও চার্জশিট পর্যালোচনা করে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, চোরাচালানের ধারার তদন্ত সঠিকভাবে হয়নি।

অভিযোগপত্রে নূর মোহাম্মদকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। সেজন্য নারাজি দিয়েছি এবং অধিকতর তদন্তও চেয়েছি।’

আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কোকেন জব্দের ঘটনায় প্রথমে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১)(খ) ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩৩(১)/২৫ ধারায় মামলা হয়েছিল। পরে আদালতের নির্দেশে চোরাচালানের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(বি) ধারা সংযুক্ত হয়। মাদক আইনের অভিযোগ তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেয় র‌্যাব। এতে নূর মোহাম্মদের পাশাপাশি তার ভাই মোস্তাক আহমেদ খানকেও আসামি করা হয়। আর বিশেষ ক্ষমতা আইনের চোরাচালানের ধারা তদন্ত করে নগর গোয়েন্দা ?পুলিশ (ডিবি)। এতে নূর মোহাম্মদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

২০১৫ সালের ৬ জুন নগর গোয়েন্দা পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরে বলিভিয়া থেকে আসা সূর্যমুখী তেলের চালান জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। ২৭ জুন তেলের চালানের ১০৭টি ড্রামের মধ্যে একটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের রাসায়নিক পরীক্ষাগারসহ চারটি পরীক্ষাগারে তেলের চালানের দুটি ড্রামের (৯৬ ও ৫৯ নম্বর) নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়। কোকেন জব্দের ঘটনায় নগরীর বন্দর থানায় ২০১৫ সালের ২৭ জুন মামলা হয়। মাদক আইনের ধারা তদন্ত শেষে নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদকে বাদ দিয়ে আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়। এরা হলেন গোলাম মোস্তফা সোহেল, মোস্তফা কামাল, মেহেদী আলম, আতিকুর রহমান, এ কে এম আমজাদ, সাইদুল ইসলাম এবং লন্ডনে অবস্থানরত ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তিতে ওই বছর ৭ ডিসেম্বর আদালত র‌্যাবকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মর্যাদার একজন কর্মকর্তা দিয়ে মাদক আইনের ধারায় মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়। চলতি বছরের ৩ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে পুলিশের অব্যাহতি দেওয়া নূর মোহাম্মদের পাশাপাশি তার ভাই মোস্তাক আহমেদ খানসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়। বাকি আটজন পুলিশের অভিযোগপত্রেরও আসামি। এদিকে ১৪ এপ্রিল চোরাচালানের ধারা তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুজ্জামান। এতেও নূর মোহাম্মদকে বাদ দেওয়া হয়। আসামি নূর মোহাম্মদ গত বছর ১৫ জানুয়ারি গ্রেফতার হয়ে ১১ জুলাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিনে মুক্তি পান। এরপর ২৭ জুলাই তিনি রপ্তানিকারকসহ সাত প্রতিষ্ঠান এবং তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করেন।

সর্বশেষ খবর