বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক

সিনহাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অবস্থান জানাল বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটির ঘটনাসহ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় সম্পর্কে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে বিএনপি। সুস্থ প্রধান বিচারপতিকে কীভাবে অসুস্থ বানিয়ে বাধ্যতামূলক ও জোরপূর্বক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে এবং ছুটির আবেদনের স্বাক্ষর কীভাবে জাল করা হয়েছে—বিএনপির পক্ষ থেকে এসবের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানের ‘লেক শোর’ হোটেলে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কূটনীতিকদের কাছে প্রধান বিচারপতির বিষয়টি নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বৈঠক শেষে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে  যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, কানাডা, সুইডেন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, নরওয়ে, তুরস্ক, আরব আমিরাত, মরক্কো, ভিয়েতনাম, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ ২৪টি দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন। বৈঠক শেষে ব্যারিস্টার মওদুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। কারণ আমরা মনে করি তিনি অসুস্থ নন। তাকে যে বাধ্যতামূলক জোরপূর্বক ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে, সেটি বলেছি, তার ছুটির চিঠি ও স্বাক্ষর পর্যন্ত জালিয়াতি করা হয়েছে।’ এ ছাড়া বৈঠকে কূটনীতিকদের কাছে সম্প্রতি কুমিল্লার একটি আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিসহ দলের নেতা-কর্মীদের আবারও গণগ্রেফতার ও মিথ্যা মামলার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। বৈঠকের শুরুতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাগত বক্তব্য রাখেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ছাড়াও বৈঠকে ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনও এতে অংশ নেন।

বিএনপি নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য রাখতে রাজি হননি। তবে একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি জোরপূর্বক ছিল তা কূটনীতিকদের কাছে ব্যাখ্যা করা হয়। প্রধান বিচারপতির ছুটির চিঠিতে ভুল বানান এবং তার স্বাক্ষর জাল করার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নেতারা কূটনীতিকদের জানান, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর থেকে সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে অর্থমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রধান বিচারপতিকে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও কটাক্ষ করে বক্তব্য রেখেছেন। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় সরকার। ফলে বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের সরাসরি হস্তক্ষেপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এর ফলেই সরকারপ্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে তার বাসায় আটকে রেখে জোরপূর্বক ছুটিতে যেতে বাধ্য করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর