শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আশা জাগাচ্ছে খুলনার শ্রমবাজার

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

দুর্যোগপূর্ণ উপকূলীয় এলাকা খুলনা, বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিই ছিল একসময় জীবন-জীবিকার মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব ও কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের ফলে এখানকার শ্রম চাহিদায় এসেছে পরিবর্তন। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে এ এলাকা থেকে বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ২০ হাজারের বেশি দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিকের। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৪৪৩ জন নারী।

জানা যায়, চার বছরের ব্যবধানে খুলনা অঞ্চলে বিদেশগামী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। ২০১৫ সালের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ২ হাজারের বেশি শ্রমিক বিদেশ গেছেন। বিদেশে কর্মসংস্থান হওয়া লোকজনের পরিবারে সচ্ছলতা আসছে। রেমিটেন্সে তাদের অবদান বাড়ছে। তবে শ্রমিক কল্যাণ সংগঠনগুলোর দাবি, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান হওয়া শ্রমিকের বাইরেও এখনো কর্মহীন রয়েছেন অনেকে। গ্রাম এলাকা থেকে প্রতিদিনই শহরমুখী হচ্ছেন হাজার হাজার শ্রমিক। পেশাগত দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এদের যোগ্য করে তুলতে পারলে সুফল মিলবে জাতীয় অর্থনীতিতে। শ্রম অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, খুলনায় সরকারিভাবে এসব শ্রমিকের প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি দিঘলিয়া ও পাইকগাছা উপজেলায় আরও দুটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শ্রমবাজারের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কাজ শুরু করেছে সরকারি-বেসরকারি আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

শ্রমিক তথ্য সেল : সঠিক কর্মসংস্থানের অভাবে ভাসমান শ্রমিকদের অনেকেই কর্মহীন থাকেন। আবার চাহিদা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিক পায় না কারখানাগুলো। এ কারণে কর্মসংস্থানের জন্য ‘তথ্য সেল’ করার দাবি তুলেছেন শ্রমিক সংগঠনগুলো। সরেজমিন দেখা গেছে, প্রতিদিন কাজের সন্ধানে খুলনা নগরীর শিববাড়ি, ময়লাপোতা, সাত রাস্তার মোড়, নিরালাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কয়েক হাজার অস্থায়ী বা ভাসমান শ্রমিক জড়ো হয়। পাশাপাশি দৌলতপুর, খালিশপুর ও রূপসা শিল্পাঞ্চলে আরও প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কর্মরত। খুলনা শ্রম দফতরের যুগ্ম শ্রম পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, অনেক ক্ষেত্রে চাহিদা থাকলেও দক্ষ শ্রমিক পায় না কারখানাগুলো। এ কারণে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের একটি ‘তথ্য সেল’ করার প্রস্তাবনা রয়েছে। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ : খুলনার সরকারি মহিলা কারগিরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান রিয়াজ শরীফ জানান, বিদেশে দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

খুলনার সরকারি মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রতি মাসে ৫৬০ জন মহিলাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের অধিকাংশই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মসংস্থানের জন্য যাচ্ছেন। একইভাবে সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (পুরুষদের জন্য), শ্রম অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, শিপইয়ার্ডসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

শ্রমিক সংগঠনের দাবি : জাতীয় শ্রমিক জোট, খুলনা জেলা শাখার সভাপতি খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় কাজে লাগানো যাচ্ছে না খুলনার সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারকে। অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের তালিকাভুক্তি, নির্ধারিত ন্যায্য মজুরি ও শ্রমিকদের রেশনিংয়ের সঙ্গে কর্মরত শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দিয়ে বৈধতার মধ্যে আনতে হবে। সরকার ও শ্রম অধিদফতর এসব দাবির প্রেক্ষিতে সম্মতি জানালেও দীর্ঘদিনে তা বাস্তবায়িত হয়নি। শ্রমিক নেতারা বলেন, খুলনার সহজলভ্য শ্রমবাজারের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব শ্রমিককে দক্ষ করে তুলতে পারলে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারকে কাজে লাগানো যাবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর