সোমবার, ১৩ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্বপ্নে চাকরি পেলেন সেই বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুপার শপ স্বপ্নে চাকরি পেলেন রাজধানীতে সন্তানের জন্য দুধ চুরি করে পালাতে গিয়ে ধরা পড়া সেই বাবা। গতকাল রাজধানীর খিলগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে সেই বাবার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেয় স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ। কোম্পানির জুনিয়র ম্যানেজমেন্ট ক্যাডার ক্যাটাগরিতে তাকে চাকরি দেওয়া হয়েছে।

তবে নিয়োগপত্রে তার পদবির জায়গাটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। ওই ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছেন, তিন মাস ধরে চাকরি নেই তার। ঘরে অভুক্ত স্ত্রী ও শিশু সন্তান। চাকরি খোঁজার পাশাপাশি ধার-দেনা করে চালাচ্ছিলেন সংসার। সেই দরজাগুলোও একে একে সব বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে সন্তানের ক্ষুধার যন্ত্রণা মেটাতে বাধ্য হয়ে সুপার শপ স্বপ্ন থেকে দুধ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন। এদিকে গত ১০ মে ঘটনাস্থলের সন্নিকটে সড়কে কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় এসি জাহিদুল ইসলাম ‘সন্তানের জন্য দুধ চুরি’ নিয়ে ফেসবুকে একটি হৃদয়বিদারক পোস্ট দেন। মুহূর্তে পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি নজরে আসে স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসিরের। তার নির্দেশে সেই বাবা ও সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানায় স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ। তবে ওই ঘটনার পর থেকে পাওয়া যাচ্ছিল না ওই ব্যক্তিকে। পুলিশকে দেওয়া তার মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়। স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরির আশ্বাস দিলেও তিনি যোগাযোগ করেননি। পুলিশের বেঁধে দেওয়া সময়েও দেখা করেননি। শনিবার রাতে তার খিলগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে আসার কথা থাকলেও আসেননি তিনি। এরপর প্রযুক্তির ব্যবহার করে তার পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, বন্ধুর নম্বর সংগ্রহ করে তার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। নাম-পরিচয় গোপন রাখার আশ্বাস দিয়ে রবিবার আবারও পুলিশের সঙ্গে দেখা করতে বলা হলে তিনি রাজি হন। বিষয়টি স্বপ্ন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়ে রাখেন এসি জাহিদুল ইসলাম। গতকাল ওই ব্যক্তি খিলগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে এলে স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেয়। পরিচয় গোপন রাখার শর্ত দেওয়ায় নিয়োগপত্রে তার নামের জায়গায় লেখা হয়েছে মি. উদ্দিন।

 জানা গেছে, ওই অসহায় ব্যক্তি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাবার একমাত্র ছেলে। আত্মসম্মানবোধের কারণে তিনি পুলিশের সঙ্গে দেখা করতে আসেননি। পুলিশ তাকে নাম-পরিচয় গোপন রাখার নিশ্চয়তা দিলে গতকাল তিনি আসেন।

স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, স্বপ্ন থেকে দুধ নিয়ে বিল না দিয়েই দৌড়ে চলে যান ওই ব্যক্তি। লোকজন উনাকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে। পুলিশ তাকে নিয়ে যায় এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে। লোকটি তার বাচ্চার দুধ না থাকা ও তার বেকারত্বের কথা জানায়। বাচ্চার ক্ষুধা নিবারণের জন্যই তিনি এমনটা করেছেন বলে স্বীকার করেন। ঘটনাটি জানতে পেরে আমাদের কাছে খারাপ লেগেছে। আমরা তাকে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।

সর্বশেষ খবর