শনিবার, ১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

উন্নয়ন নিয়ে মুখোমুখি লিটন-বাদশা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

উন্নয়ন নিয়ে মুখোমুখি লিটন-বাদশা

রাজশাহীর উন্নয়নের দাবি নিয়ে দুই সিটি মেয়র ও স্থানীয় এমপির পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড়ু বইছে। উন্নয়নের কৃতিত্ব নিয়ে সাম্প্রতিক কালে এই জাতীয় প্রতিযোগিতা উপভোগ করছেন কেউ কেউ। রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশার পক্ষে গত ১০ এপ্রিল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানানো হয়, নগরীর ৯টি স্কুল পাচ্ছে নতুন ভবন। গত মঙ্গলবার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) জনসংযোগ দফতরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের প্রচেষ্টায় নগরীর ৬টি স্কুল নতুন ভবন পাচ্ছে। এমপি ও মেয়রের পক্ষে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে একই স্কুলের নাম উল্লেখ আছে। রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলতে থাকা বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন নিয়েও পাল্টাপাল্টি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন এমপি ও মেয়র। রেলপথ মন্ত্রণালয় ট্রেনটি চালুর সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার পর এমপি ফজলে হোসেন বাদশার পক্ষে সংসদে দেওয়া তার বক্তব্যের কপিসহ দাবি করা হয়, ‘ট্রেনটি চালুর জন্য তিনি দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছিলেন। তারই প্রচেষ্টায় ট্রেনটি চালু হলো।’ আবার মেয়রের পক্ষে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মেয়র লিটনের প্রচেষ্টায় ট্রেনটি চালু হলো।’ রাজশাহীর উন্নয়ন কাজ নিয়ে হালে শুরু হয়েছে এই দুই নেতার টানাটানি। একসঙ্গে বা উভয়ের চেষ্টায় হয়েছে এমন দাবি করছেন না কেউ। শুধু স্কুলের নতুন ভবন আর ট্রেন চালু নয়, সব উন্নয়ন কাজেই পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দিচ্ছেন তারা দুজনই। এমনকি নগরীর উচ্ছেদ অভিযানেও বাদশা-লিটন দুই দিকে অবস্থান নিয়েছেন। সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ অভিযান চালালে বাদশা তার বিরোধিতা করেন। বিবৃতি দিয়ে বাদশা বলেন, পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ ঠিক নয়।

রাজশাহীতে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক। মেয়র লিটন ও এমপি বাদশা দুজনই দাবি করেছেন, এটি তাদের প্রচেষ্টা। আলাদা নির্বাচনী ইশতেহারেও তারা ঘোষণা করেছেন সেই কথা। হাই-টেক পার্কে কর্মসংস্থান হবে ১৪ হাজার মানুষের-দুজনই দাবি করে চালিয়েছেন প্রচারণা। এখনো সেই প্রচারণা চলছে। ফজলে হোসেন বাদশার দাবি, তিনি সংসদে এনিয়ে কথা বলেছেন। আর লিটনের দাবি, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই প্রকল্পটি রাজশাহীর জন্য এনেছেন।  জেলা পরিষদ মিলনায়তনটির আধুনিকায়নের কাজ করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। মাঝপথে সেটি বন্ধ ছিল। পরে সেটি সংস্কারকরে জেলা পরিষদকে বুঝিয়ে দিয়েছে রাসিক। এই কাজটি মেয়র তার নিজের বলে দাবি করার পরই এমপি বলেছেন, কাজটি শেষ করতে তিনি এক কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। মেয়রের নির্বাচনী ইশতেহারে ১২ নম্বর অনুচ্ছেদের ‘গ’ তে বলা হয়েছে রাজশাহী কলেজ চত্বরে ভাষা শহীদদের স্মরণে একটি কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হবিবুর রহমান জানান, সেই কমপ্লেক্সটি নির্মাণের জন্য স্থানীয় এমপি ফজলে হোসেন বাদশা ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কাজটির বাস্তবায়ন করছে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকে এই দুই নেতার মধ্যে সম্পর্ক শীতল। মাঝে সংসদ নির্বাচনের সময় দূরত্ব কিছুটা কমলেও নির্বাচনের পর সেটি আবারও বেড়ে যায়। এরপর থেকেই উন্নয়ন কাজের কৃতিত্ব নিয়ে টানাটানি শুরু হয় দুই নেতার মধ্যে।

ফজলে হোসেন বাদশা জানান, তিনি এমপি হিসেবে যা বরাদ্দ পেয়েছেন, সেগুলো দিয়ে নগরীর উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন। কৃতিত্ব নেওয়ার কিছু নেই বলে জানান তিনি। আর সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, তার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সরকার বরাদ্দ দিয়েছে। প্রকল্পগুলো তিনি বাস্তবায়ন করছেন।

সর্বশেষ খবর