বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

সংসদে সরকার ও বিরোধী পক্ষ পাল্টাপাল্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংসদে সরকার ও বিরোধী পক্ষ পাল্টাপাল্টি

সংসদে আসার জন্য বিএনপি-গণফোরাম এমপিদের অভিনন্দন জানিয়ে মহাজোটের সংসদ সদস্যরা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে আসলেও নির্বাচন ভ ুল করতে সব কৌশলই প্রয়োগ করেছিল। তাতে ব্যর্থ হয়ে নির্বাচন ও সংসদের বৈধতা নিয়ে কথা বলছে। তারপরও আজ জল ঘোলা করে হলেও বিএনপি-গণফোরামের বন্ধুরা সংসদে এসেছেন। কিন্তু তাতে আত্মতৃপ্তির অবকাশ নাই। বরং নির্বাচনকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনার কাজটি আমাদের করতে হবে।

অপর দিকে বিএনপির এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, বাজেট বাড়ছে কিন্তু দেশ ও জনগণের উন্নয়ন হচ্ছে না। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে খেলাপি ঋণে বাংলাদেশ শীর্ষে। সারা দেশে দুর্নীতি মহামারি আকার ধারণ করেছে। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে সরকারি দলের নেতারা টাকার পাহাড় তৈরি করছে। প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। গতকাল স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, সরকারি দলের সদস্য ও সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, কাজী কেরামত আলী, রুশেমা বেগম, বেগম শামসুন নাহার, এ কে এম ফজলুল হক, সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন ও সেলিমা আহমেদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, জাসদের শিরীন আখতার এবং বিএনপির ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা ও জাহিদুর রহমান। বাজেটের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, বাজেট বাড়ছে কিন্তু দেশ ও জনগণের উন্নয়ন হচ্ছে না। ব্যাংকের টাকা লুটপাট চলছে। সারা দেশে দুর্নীতি মহামারি আকার ধারণ করেছে। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে সরকারি দলের নেতারা টাকার পাহাড় তৈরি করছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে খেলাপি ঋণে বাংলাদেশ শীর্ষে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বাজেটকে ঋণ খেলাপিবান্ধব উল্লেখ করে তিনি বলেন,  খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে বেড়ে বর্তমানে হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। আদায়ের কোনো লক্ষণ নেই। আবার ঋণ খেলাপিদের ছাড় দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। নানা রকম প্রদর্শিত ও অপ্রদর্শিত ঋণ যদি ধরা হয় তা হবে ৩ লাখ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ধুঁকছে। সরকার যে ঋণ খেলাপিদের সঙ্গে আছে তা এরই মধ্যে সরকারের কর্মকান্ডে বোঝা যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

স্কাইপিতে বসে রাজনীতি করছে তারেক : জাসদের শিরীন আখতার ঋণ খেলাপিসহ দেশের অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন কঠোর হস্তে দমন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিএনপির সংসদ সদস্যরা নিজেরা সংসদে যোগ দিয়ে সংসদকে অবৈধ বলে নিজেদেরকে অবৈধ বলছে। জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকতে কখনো নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলেননি। তিনি আরও বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, অগ্নিসন্ত্রাস, ভয়াল নৃশংসতার কারণে দেশের জনগণ বিএনপিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারেক জিয়া টাকা পাচারের কারণে এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেডে হত্যা করতে চেয়েছিল পুরো রাজনৈতিক দলকে। সেই কারণে দেশে আসতে পারছে না। স্কাইপিতে বসে রাজনীতি করছে। এই রাজনীতি কিছুতেই চলতে পারে না।

কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার যুবকরা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিচ্ছে : ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার যুবকরা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে। তারা মাদকাসক্তসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।

অতিদরিদ্রের হার ১১ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি : পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গত এক দশকে প্রমাণ করেছে, তারা বড় বাজেট দিতে পারে এবং তা বাস্তবায়নও করতে পারে। আগে দেশের দরিদ্রের সংখ্যা ছিল ৪৮ ভাগ, বর্তমান সরকার তা ২১ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। অতিদরিদ্রের হারও ৩৩ ভাগ থেকে ১১ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এটা একটা বিশাল অর্জন। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী ট্যানেলের মতো বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। বাংলাদেশকে আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে ২০২১ সাল পর্যন্ত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

৯৫ হাজার তথ্য সরবরাহ হয়েছে : তথ্যমন্ত্রী ড.  মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ সংসদকে জানিয়েছেন, জনগণের ক্ষমতায়ন ও প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের কর্মকাে  স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকার ২০০৯ সালের ২৯ মার্চ জাতীয় সংসদে ‘তথ্য অধিকার আইন ২০০৯’ পাস করে। একই বছরের ৬ এপ্রিল গেজেট আকারে আইনটি প্রকাশিত হয়। সে অনুযায়ী ১ জুলাই তথ্য কমিশন গঠন করা হয়। এরপর  থেকে ৯৯ হাজার ২৩৮টি তথ্য প্রাপ্তির আবেদনের  প্রেক্ষিতে সর্বমোট ৯৫ হাজার ২৩৩টি তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩ হাজার ৮৩টি দায়েরকৃত অভিযোগের মধ্যে ২ হাজার ৯৭২টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে এবং ১১১টি অভিযোগ নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

জাতীয় পার্টির সদস্য সালমা ইসলামের তারকা চিহ্নিত লিখিত প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) আধুনিকায়নের লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিটিভিকে আরও আধুনিকায়নে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৮৬৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ৪টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর