সোমবার, ২২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

খাদ্যপণ্য খালাসে বিলম্ব, বাঁধছে জট

বেনাপোল বন্দর

রুহুল আমিন রাসেল

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে খাদ্যপণ্য খালাসে বিলম্ব হচ্ছে। এই বন্দরে খাদ্যসামগ্রী পরীক্ষায় নেই স্বয়ংসম্পূর্ণ পরীক্ষাগার। ফলে আমদানি হওয়া পণ্যের নমুনা বেনাপোল থেকে ঢাকায় এনে পরীক্ষা করতে হয় ব্যবসায়ীদের। জানা গেছে, পণ্য খালাসে যেমন বিলম্ব হচ্ছে, তেমনি বন্দরে জট বাঁধছে পণ্যসামগ্রীর। এর সঙ্গে ওজনে কারচুপি ও আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়েছে বেনাপোল কাস্টমস হাউস। এ প্রসঙ্গে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিসিআইআর) একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পরীক্ষাগার বেনাপোল বন্দরে নেই। ফলে ব্যবসায়ীদের পণ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পণ্য খালাসে বিলম্ব হয়। এ সংকট থেকে উত্তরণে স্বয়ংসম্পূর্ণ পরীক্ষাগার স্থাপন জরুরি। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন স্বস্তি পাবেন, তেমনি রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়বে। এর আগে খাদ্যপণ্য খালাসে বিলম্ব হওয়ার কথা জানিয়ে ৩০ জুন বিসিসিআইআরের চেয়ারম্যানকে পত্র দিয়েছেন বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ                বেলাল হোসাইন চৌধুরী। তার স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের দ্রুত খালাস এবং বাণিজ্য সুবিধার স্বার্থে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট থেকে ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা হয়েছে বেনাপোল বন্দর। আমদানি নীতি আদেশের বিধান অনুযায়ী খাদ্যসামগ্রী পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে জন্য খাদ্যসামগ্রীর নমুনা ঢাকায় প্রেরণ করতে হয়। এরপর পরীক্ষণের প্রতিবেদন প্রাপ্তিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। ফলে খাদ্যপণ্য খালাসে বিলম্ব ঘটে। পত্রে আরও বলা হয়, বেনাপোল স্থলবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত ও বাণিজ্য সুবিধা নিশ্চিত করার স্বার্থে বিসিসিআইআরের স্বয়ংসম্পূর্ণ পরীক্ষাগার শাখা স্থাপনের জন্য এর আগেও অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু অদ্যাবধি বিসিসিআইআর থেকে কোনো অগ্রগতির তথ্য পাওয়া যায়নি। পত্রের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট দফতরেও। এদিকে শুল্ক গোয়েন্দার নিয়মিত অভিযানে প্রায়ই বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাসে রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উঠে আসছে। সম্প্রতি শুল্ক গোয়েন্দার বেনাপোল সার্কেল ২ কোটি ২০ লাখ ১৫ হাজার ১৯১ টাকার তিনটি পণ্য চালান আটক করেছে। ওই পণ্যের চালানগুলোর আমদানিকারক মেসার্স রেমু এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স টিএল ট্রেডিং, মেসার্স দিল্লি ট্রেডার্স। এসব প্রতিষ্ঠানের আমদানি পণ্য খালাস স্থগিত করে আটকের কথা জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা।

এ প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বেনাপোল বন্দরে শুল্ক ফাঁকি ও চোরাকারবারিদের কঠোরভাবে দমন করব। এ ক্ষেত্রে শুল্ক গোয়েন্দা সর্বোচ্চ সতর্ক।’

জানা গেছে, সপ্তাহে সাত দিন বাণিজ্যসেবা চালু থাকলেও ব্যবসায়ীরা এর সুফল পাচ্ছেন না। ফলে রাজস্ব আয় কমেছে। বেনাপোল কাস্টমস হাউসে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। জুলাই থেকে গত মে মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত এই ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি ১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, শুল্ক ফাঁকি আর ঘুষ-বাণিজ্যের কারণে বড় অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়েছে বেনাপোল। কখনো পণ্য আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা, আবার ঘোষণার অতিরিক্ত পণ্য এনে সরকারের শুল্ক ফাঁকি দেওয়া বেনাপোল কাস্টমসে নিত্যদিনকার চিত্র। আর এসব কাজে মোটা অঙ্কের টাকা পেয়ে সহযোগিতা করেন কাস্টমসের একশ্রেণির কর্মকর্তা। আর একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কোটি কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেন। এটিও রাজস্ব ঘাটতির অন্যতম কারণ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর