রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
সিলেট সিটি করপোরেশনে ‘পুকুর চুরি’

ভেঙে পড়ল পুকুরের গার্ড ওয়াল ও রাস্তা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ভেঙে পড়ল পুকুরের গার্ড ওয়াল ও রাস্তা

উন্নয়ন কাজ নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ অনেক পুরনো। অপরিকল্পিত ও নিম্নমানের কাজের জন্য সরকারি বরাদ্দের টাকা সঠিকভাবে কাজে আসছে না নগরবাসীর কাছ থেকে এমন অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়। এবার অভিযোগ উঠল পুকুর সংস্কার কাজে বড় রকমের অনিয়মের। প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজের দুই বছরের মাথায় ফের খনন করতে গিয়ে ভেঙে পড়েছে আরসিসি গার্ডওয়াল ও পুকুর পাড়ের রাস্তা। স্থানীদের অভিযোগ অপরিকল্পিতভাবে খনন ও নিম্নমানের কাজের জন্য ঘটেছে এমন ঘটনা। উন্নয়নের নামে লুটপাটের উদাহরণ হিসেবে তারা তুলে ধরছেন নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের রায়নগর সোনারপাড়ার এই পুকুর সংস্কার কাজকে। তারা এটাকে সিটি করপোরেশনের ‘পুকুর চুরি’ হিসেবেই আখ্যা দিচ্ছেন।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে রায়নগর সোনারপাড়া জামে মসজিদ পুকুরের গার্ড ওয়াল এসএস রেলিং ও মাটি ভরাট কাজ করানো হয়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও তৎকালীন কাউন্সিলর দিনার খান হাসু এ কাজ উদ্বোধন করেন। দুই বছর পর একই পুকুর সংস্কার কাজের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। গত বুধবার রাতে এক্সেভেটর লাগিয়ে ঠিকাদার মিজান আজিজ সুইট পুকুর থেকে মাটি উত্তোলন শুরু করেন। কিছু মাটি তোলার পরই পুকুরের পূর্ব ও উত্তর পাশের আরসিসি গার্ডওয়ালসহ রাস্তা ধসে পড়ে। একই সঙ্গে দক্ষিণ পাশের ‘রুহাদ ভিউ’ নামক বহুতল ভবনের ওয়ালের পাশ ঘেঁষে দেখা দেয় ফাটল। পুকুরের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের রাস্তায়ও আড়াআড়িভাবে ফাটল দেখা দেয়। গত শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুকুরের পাড় ধসে ‘রুয়াদ ভিউ’ ও দক্ষিণ পাশের রাস্তা ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় কয়েকজন শ্রমিক মিলে ফের পুকুরের মাটি ফেলছেন। সরেজমিনে আরও দেখা যায়, পূর্ব ও উত্তর পাশের আরসিসি ওয়ালের ভাঙা স্থানে কোনো রডের ব্যবহার নেই। যদিও সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা বলছেন, আরসিসি ওয়ালের সংযোগস্থল (জয়েন্টে) ভাঙায় রড দেখা যাচ্ছে না। ওয়ালের স্থায়িত্ব ও শক্তি বাড়ানোর জন্য জয়েন্টে রডের ব্যবহার হয়নিÑ প্রকৌশলীরা এমন দাবি করলেও তাদের এই যুক্তি টিকিয়ে রাখতে পারেনি দুই বছর আগে করা আরসিসি ওয়াল। জয়েন্টের উভয়পাশের ওয়ালই ধসে পড়েছে। এ ছাড়া পুকুরের উত্তর পাশের রাস্তার মাঝামাঝি ফাটল দিয়ে ধসে পড়েছে। ওই রাস্তায়ও কোনো রডের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাস্তাটির কোথাও পাঁচ ইঞ্চি আবার কোথাও তিন ইঞ্চি ঢালাই ছিল। সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুকুর সংস্কারের কাজটি পেয়েছিল পিনু অ্যান্ড কানু নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে তৎকালীন কাউন্সিলর দিনার খান হাসু ঠিকাদারের কাছ থেকে কিনে নিয়ে নিজে কাজটি করান। কাউন্সিলর নিজে ঠিকাদার হওয়ায় তার ইচ্ছেমতো কাজ করেন। সিটি করপোরেশনের দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীদের ম্যানেজ করেই তিনি দায়সারাভাবে কাজটি করেন। নিজ দলের নেতা হওয়ায় এই কাজের ব্যাপারে নীরব ছিলেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও। সাবেক কাউন্সিলর দিনার খান হাসু দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে আরসিসি ওয়াল ও রাস্তা ধসে পড়ার জন্য সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা দায়ী করছেন পুকুর থেকে মাটি উত্তোলনকারী মিজান আজিজ সুইটকে। তাদের অভিযোগ, পুকুর থেকে বেশি পরিমাণে মাটি উত্তোলন করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিজান আজিজ সুইট ওই পুকুর সংস্কারের কাজের অফিশিয়াল ঠিকাদার নয়। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবেই তিনি ওই কাজ করছিলেন। এ ব্যাপারে মিজান আজিজ সুইটের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, ‘ঠিকাদার মিজান আজিজ সুইট অতিরিক্ত মাটি উত্তোলন করায় ওয়াল ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া নির্মাণ কাজে সঠিকভাবে রডের ব্যবহার হয়েছিল কি-না তা খতিয়ে দেখতে ওয়াল ভেঙে তদন্ত করা হবে।’ এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করার কথা জানিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নির্মাণ কাজের অনিয়ম হোক আর অতিরিক্ত মাটি উত্তোলনের জন্য হোক, দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর