সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
রাজশাহী

মোড়ে মোড়ে চাঁদাবাজি

প্রতিদিন চাঁদা উঠছে আড়াই লাখ টাকা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

মোড়ে মোড়ে চাঁদাবাজি

রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকায় ট্রাক টার্মিনালটি ইজারা দিয়েছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। নিয়ম অনুযায়ী এই টার্মিনালে যেসব ট্রাক প্রবেশ করবে বা রাখা হবে, কেবল সেগুলো থেকেই ফি বা চাঁদা আদায় করতে পারবে ইজারা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এ নিয়মের কোনো বালাই নেই। ট্রাক টার্মিনালের নামে নগরজুড়েই চলছে চাঁদাবাজি। নগরীর ভিতর দিয়ে যেসব ট্রাক চলাচল করছে, সবগুলোকেই চাঁদা দিতে হচ্ছে। রীতিমতো লাঠি, রড হাতে নিয়ে মহাসড়কে দাঁড়িয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। কিন্তু এনিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। এ কারণে বেপরোয়া চাঁদাবাজরা। টাকা না পেলে কখনো কখনো ট্রাক চালকদের গায়ে হাত তুলছে চাঁদা আদায়কারীরা। আবার কখনো কখনো ঘটছে জীবনহানির মতো দুর্ঘটনা। তার পরও থেমে নেই চাঁদাবাজি। এনিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ট্রাকচালক ও মালিকদের মধ্যে। সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর ট্রাক টার্মিনালের সামনে ৫-৬ জন লাঠি ও রড হাতে নিয়ে রাজশাহী সিটি বাইপাশ দিয়ে যাওয়া সব ট্রাক থেকে জোর করে চাঁদা তুলছে। ট্রাকগুলোকে জোর করে থামিয়ে চালকদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। অথচ এ ট্রাকগুলো ছুটে যাচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে। ট্রাক টার্মিনালের ভিতরে প্রবেশ না করলেও চালকদের দিতে হচ্ছে চাঁদা। চাঁদা আদায়ের জন্য রাস্তার পাশে ফুটপাথের ওপরে একটি ঘরও নির্মাণ করা হয়েছে। চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই ট্রাক টার্মিনালটি ইজারা নিয়েছেন রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কামাল হোসেন রবি। তার নির্দেশেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে সব ট্রাক থেকে তারা চাঁদা উত্তোলন করছেন ১০০ টাকা করে। নগরীর শিরোইলে বাফার সার গোডাউনের সামনেও ট্রাক টার্মিনালের নামে ৫০ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন রাজশাহীতে প্রবেশকারী অন্তত ৫০০ ট্রাক থেকে চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১০টি ট্রাকও প্রবেশ করানো হয় না টার্মিনালে। কিন্তু প্রতিটি ট্রাক থেকেই উত্তোলন করা হচ্ছে চাঁদা। আর সেই টাকা হচ্ছে লুটপাট। সব মিলিয়ে শুধু ট্রাক টার্মিনালের নামেই অন্তত আড়াই লাখ টাকা চাঁদা উঠছে প্রতিদিন। হোসেন আলী নামের একজন শ্রমিক বলেন, এই টাকা ইউনিয়নের ফান্ডে জমা হয়।

এখন পর্যন্ত কত টাকা জমেছে জানতে চাইলে তিনি এর কোনো উত্তর দিতে পারেননি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রাকের চালক বাবলু বলেন, ‘আমার মালবাহী ট্রাকটি যাবে ঢাকায়। কিন্তু রাজশাহী ট্রাক টার্মিনালের নামে চাঁদা দিতে হলো ৫০ টাকা। আবার ট্রাক শ্রমিকদের নামে দিতে হলো আরও ৫০ টাকা। সব মিলিয়ে দুটি স্লিপে এ টাকা আদায় করা হলো অনেকটা জোর করে। টাকা দিতে না চাইলেই চাঁদা আদায়কারীরা তেড়ে আসে মারতে। কখনো কখনো গাড়ির গ্লাসে বা আমাদের ওপরেও হামলা করে। লাঠি-রড দিয়ে হামলা চালায়। এতে ভয়ে বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়।’

আরেক ট্রাকচালক বলেন, টাকা না দিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। টাকার জন্য একেবারে ট্রাকের সামনে এসে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যায় আদায়কারীরা। এভাবে কখনো ট্রাক নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থেকে যায়।

রাস্তায় চাঁদা আদায় সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফরিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের টাকা ব্যয় হয় মালিক-শ্রমিকদের কল্যাণেই। কিন্তু আমাদের বাইরেও রাস্তায় নেমে জোর করে টাকা আদায় হয় ট্রাক থেকে। এ টাকার কোনো হিসাব নেই।’

রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কামাল হোসেন রবি বলেন, ‘অধিকাংশ টাকা উত্তোলন হয় ট্রাক মালিক-শ্রমিকের নামে। শুধু ৫০ টাকা করে উত্তোলন হয় ট্রাক টার্মিনালের নামে। তাও যেসব ট্রাক রাজশাহীর বাইরে থেকে আসে, কেবল সেগুলো থেকেই আমরা চাঁদা আদায় করি। রাজশাহীর ট্রাকচালকরা চাঁদা দিতে চায় না।’

রাস্তায় ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি সম্পর্কে জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘শ্রমিকরা চাঁদা ওঠালে আমরা কী করব। এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। আর ট্রাক টার্মিনালের চাঁদা কীভাবে উঠছে তা খতিয়ে দেখা হবে।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর