বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
আতঙ্কের শহর নারায়ণগঞ্জ

প্রতি ১০ ঘণ্টায় মৃত্যু ১ জনের ২ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১ জন

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত ৩৫ জনের মধ্যে ১৫ জন নারায়ণগঞ্জের। আর গত ৪৮ ঘণ্টায় শুধু নারায়ণগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত ২৭ জন। সব মিলিয়ে এ জেলায় আক্রান্ত ৩৮ জন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রবিবার থেকে সোমবার ২৪ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জে ১২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ জেলায় প্রতি দুই ঘণ্টায় একজন করে আক্রান্ত হচ্ছে। মৃত্যুর হার সারা দেশের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে বেশি। প্রতি ১০ ঘণ্টায় মারা যাচ্ছে একজন করে। পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ ও সরকারি হিসাব বিশ্লেষণে বের হয়ে এসেছে এমন তথ্য। জেলা সিভিল সার্জন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে দেখা যায়, জেলায় প্রথম ৮ মার্চ দুজন ইতালি প্রবাসী আক্রান্ত হন। এর পরই ২৩ মার্চ আরও একজন আক্রান্ত হন। ২ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬-৭ জন। কিন্তু তা লাফিয়ে বাড়তে থাকে ৫ এপ্রিল থেকে। ৫ এপ্রিল রবিবার থেকে পরদিন সোমবার ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হন ১২ জন। আবার সোমবার থেকে মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হন ১৫ জন। দুই দিনে অর্থাৎ ৪৮ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭ জন। এর আগে ছিল ১১ জন। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে আক্রান্ত ৩৮ জন। সেই হিসাবে নারায়ণগঞ্জে প্রতি দুই ঘণ্টায় ১ জনের বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে মৃত্যুর হারে দেশের অন্য জেলার চেয়ে এগিয়ে আছে নারায়ণগঞ্জ। হিসাব কষলে দেখা যায়, গত ৭২ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ৮ জন। সেই হিসাবে প্রতি ১০ ঘণ্টা ১২ মিনিটে মারা যাচ্ছে ১ জন করে। যেমন ৪ এপ্রিল দিবাগত রাতে ফতুল্লার কাশীপুরের ব্যবসায়ী আবু সাইদ (৫৫), ৫ এপ্রিল রবিবার রাতে সদর থানার দেওভোগ আখড়া এলাকার চিত্তরঞ্জন ঘোষ (৬৫), ৬ এপ্রিল সোমবার দুপুরে শহরের শীতলক্ষ্যার ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন (৫০) ও একই দিন বিকালে শহরের জামতলায় ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন (৬০), রাত ১২টায় শহরের চাষাঢ়া মাসুদা প্লাজার মালিক চৌধুরী মাহমুদ করোনার উপসর্গ নিয়ে কুর্মিটোলায়, সোমবার দিবাগত রাত ২টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান জেলার ব্যান্ড গিটারিস্ট খায়রুল আলম হিরু, ৭ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে শহরের মিশপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান (৪৮) করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান। আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশির ভাগ নারায়ণগঞ্জ মূল শহর ও শহরতলি এলাকার। উপসর্গ নিয়ে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন এমন রোগীর টেস্ট করে করোনা পজিটিভ হয়েছে এ পর্যন্ত দুজনের। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিদিন হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জে আক্রান্তের সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জকে আইইডিসিআর রেড জোন ঘোষণা করেছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর পরও অনেকের করোনা পজিটিভ প্রকাশ পাচ্ছে। যেমন বন্দরের শিউলি আক্তার পুতুলের মৃত্যুর দুই দিন পর ২ এপ্রিল করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয় যায়। কাশীপুরের ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পর টেস্ট রিপোর্টে করোনা পজিটিভ আসে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর খোরশেদ বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে দয়া করে কেউ বের হবেন না। আমরা কাজ করছি। তাই আমরা জানি নারায়ণগঞ্জে করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে।’ তবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি নন কেউ। গতকাল বিকালে নাসিকের অপর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শকু জানান, দুপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিদ্দিকুর রহমান নামে একজন মারা গেছেন। তার লাশ নিয়মমাফিক দাফন করা হবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন নারায়ণগঞ্জ রেড জোন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

প্রসঙ্গত, দেশে সর্বপ্রথম ৮ মার্চ শহরের জয়নাল প্লাজায় ইতালি প্রবাসী দুজনকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত করে সরকারের রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। পরে ৩০ মার্চ বিকালে করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় প্রথম মৃত্যু হয় বন্দর উপজেলার রসুলবাগ এলাকার শিউলি আক্তার পুতুল (৪৫) নামে এক নারীর। ওই নারীর মৃত্যুর পর কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ব্রেন স্ট্রোক উল্লেখ ছিল। কিন্তু পরে ২ এপ্রিল তার টেস্ট রিপোর্টে করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এর পরই নড়েচড়ে বসেন নারায়ণগঞ্জের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরতরা।

সর্বশেষ খবর