শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বিতর্কিতরা তিন উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

বিতর্কিতরা তিন উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ৬০০ কোটি টাকার তিন প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিতর্কিতরা। আগে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে সঠিকভাবে কাজ না করায় অপসারিত, অভিজ্ঞতা নেই এমন ও জামায়াত সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা পেয়েছেন প্রকল্প পরিচালক হওয়ার সুযোগ। গত ২৩ জুন ৬ কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয় এসব প্রকল্পে। এর আগে তিনটি প্রকল্পে তিনজনকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়। এরপর ১৩ জনকে প্রকল্প সহকারী হিসেবে পদায়ন করা হয়। যাদের অনেকের বিরুদ্ধে এর আগে আছে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ। ফলে এ নিয়ে বিএমডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিএমডিএ সূত্র জানায়, ১২৮ কোটি টাকার পুকুর প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক করা হয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফুল হককে। এর আগে নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফুল হক এসডব্লিউএপি (বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও সেচ প্রকল্প পর্যায়-২) প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। ২০১৭-১৮ সালে প্রকল্পটি শেষ হয়। ওই প্রকল্পটির মূল্যায়ন (পারফরম্যান্স) ভালো না থাকায় তাকে বাদ দিয়ে পরবর্তীতে শিব্বির আহমেদ নামে আরেকজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আগের প্রকল্প থেকে অপসারিত হলেও আবারও শরীফুল হককে প্রকল্প পরিচালক করা হয়েছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় রংপুরের প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালক করা হয় হাবিবুর রহমানকে। তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এজন্য তাকে বিএমডিএর বর্তমান চেয়ারম্যান আকরাম চৌধুরী রাজশাহী থেকে রংপুরে বদলি করেন। কর্মচারীরা আন্দোলন করতে গিয়ে বিএমডিএর প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়েছিল। সেটির নেপথ্যে ছিলেন হাবিবুর রহমান। তাকে ওই প্রকল্পের পরিচালক করায় ক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের একাংশ। নাটোরের প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার খাল খনন প্রকল্পে পরিচালক করা হয়েছে সুমন্ত কুমার বসাককে। প্রকল্পটির মেয়াদকাল ৪ বছর। সুমন্ত কুমার বসাকের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৪ সালে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রকল্প পরিচালকের চাকরি কমপক্ষে ৬ মাস থাকার নিয়ম আছে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী তিনি প্রকল্প পরিচালক হতে পারেন না। এ ছাড়া তার এমন কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তারপরও এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সুমন্ত বসাককে প্রকল্প পরিচালক করা হয়েছে। নিয়ম ভেঙে শুধু সুমন্ত বসাক প্রকল্প পরিচালক হয়েছেন এমন নয়। দরপত্রেও অনিয়মের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। খাল খননের জন্য সর্বনি¤œ দরদাতাকে কাজটি দেওয়া হয়নি। ১০ ভাগ কমিশন নিয়ে এক রাজনৈতিক নেতার ভাগিনাকে কাজটি দেওয়া হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কাজটি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শুরু না করেই ইতিমধ্যে অর্ধশত কোটি টাকা খরচ করে ফেলা হয়েছে। বছরে ৫ কিলোমিটার হারে খাল খননের যে কথা ছিল, সেটি হয়নি। ইতিমধ্যে বছর শেষ হয়েছে। তবে সুমন্ত বসাক জানান, নিয়ম মেনে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এ নিয়ে কোনো ঠিকাদার তার বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকলে কেউ না কেউ অভিযোগ করত। আর প্রকল্প পরিচালক হওয়া প্রসঙ্গে তিনি নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। বিএমডিএ সূত্রমতে, নাটোর জেলার সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সুমন্ত কুমার বসাককে বিএমডিএর গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে কর্মরত থাকা অবস্থায় অনিয়মের অভিযোগে বদলি করা হয়েছিল।

 ২০১৭ সালে পাবনার এক এমপির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী থেকে জয়পুরহাট জেলায় বদলি করা হয় তাকে। পরবর্তীতে গত বছরের অক্টোবরে তাকে আবারও রাজশাহী সদরে বদলি করা হয়। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক শ্যাম কিশোর রায়ের সঙ্গে তার মোবাইল (০১৭১১-৭৮১৭০৪) ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে প্রশ্ন লিখে মেসেজ পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

সর্বশেষ খবর