শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে মাদক ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া, হত্যা-লাঞ্ছনা বৃদ্ধি

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের জের ধরে চট্টগ্রামে মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে হামলা ও লাঞ্ছিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।  কেউ কেউ আবার খুনও হচ্ছেন। এতে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের সারি। একাধিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার তালিকাভুক্ত প্রায় সব মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্য রয়েছে পুলিশের কিছু সদস্য, কথিত সোর্স ও ক্যাশিয়ারের সঙ্গে। তাই কোনো অভিযান পরিচালিত হওয়ার আগেই অভিযানের তথ্য পেয়ে যায় মাদক ব্যবসায়ীরা। ফলে পুলিশের অভিযানগুলো ব্যর্থ হয়ে যায়। এ ছাড়া কথিত ক্যাশিয়ার ও সোর্সদের সার্বিক সহযোগিতায় এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে মাদক ব্যবসায়ীরা। ফলে কেউ প্রতিবাদ করলেই তার ওপর হামলা চালায় মাদক ব্যবসায়ীরা। ফলে প্রতিনিয়ত মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে হামলার শিকার হচ্ছে কেউ না কেউ। মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় গত ২২ মে নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন ধনিয়ালাপাড়া মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে হামলার শিকার হয় মোখলেছুর রহমান। এ ঘটনার থানায় লিখিত জানানোর পর উল্টো মাদক ব্যবসায়ীরা হুমকি দিচ্ছে প্রাণনাশের। এ বিষয়ে মোখলেসুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘হামলার পর থানায় অভিযোগ করতে চাইলে প্রথমে মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার নির্দেশের পর তা জিডি হিসেবে গ্রহণ করে। গত ২০ জুন নগরীর হাজিপাড়া এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক কর্মসূচি পালন করার অভিযোগ তুলে মীর সাদেক অভি নামে ছাত্রদলের এক নেতার ওপর হামলা চালায় মাদক ব্যবসায়ীরা। তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গত মঙ্গলবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় অভির। মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় গত ২২ জুন খুন হন সাতকানিয়ার যুবলীগ নেতা মোসাদ্দেকুর রহমান। একই ঘটনায় তার ভাই ফয়সালুর রহমানও মারাত্মকভাবে আহত হন। ১২ জুন সীতাকু-ের ছলিমপুর এলাকায় মাদক-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে মারাত্মকভাবে আহত হন মোহাম্মদ মোস্তাকিম। এ সময় তাকে রক্ষা করতে এসে খুন হন তার মা মর্জিনা বেগম।

৬ মার্চ নগরীর কর্ণফুলী এলাকায় ইয়াবা সেবনে বাধা দেওয়ায় ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় আজগর আলী নামে এক যুবককে। ১ জানুয়ারি নগরীর বায়েজিদ এলাকায় মাদক ব্যবসার বিরোধের জের ধরে খুন হন মোহাম্মদ রিপন নামে এক যুবক। অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কতিপয় পুলিশ সদস্যের রয়েছে সখ্য। খোদ থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের কথিত ক্যাশিয়ারই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে মাদকের আখড়াগুলো। বিনিময়ে থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা মাসোহারে হিসেবে নেয় লাখ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের নামে নগরীর কমপক্ষে তিন শতাধিক মাদক স্পট থেকে আদায় করা হয় লাখ লাখ টাকা। একইভাবে থানা পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার নামেও এসব মাদক স্পট থেকে আদায় করা হয় অর্থ। ঠিক অভিন্ন চিত্র চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানার বিরুদ্ধে। পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক জেলার বিভিন্ন থানায়ও ওপেন সিক্রেট।

সিএমপির কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার কোনো সুযোগ নেই পুলিশ সদস্যদের। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, ‘মাদক ব্যবসার প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রত্যেক থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযান জোরদারও করা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর