শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বিপর্যয়ে রেমিট্যান্সযোদ্ধারা

গবেষণা জরিপ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

করোনাকালে গত চার মাসে দেশে আসেন প্রায় চার লাখ প্রবাসী। এর মধ্যে ৬০ শতাংশের বিদেশ থেকে আসার সময় আনা অর্থ শেষ হয়ে গেছে। এখন তারা আত্মীয়-স্বজননির্ভর। বিদেশ থেকে আসা ৪৯ শতাংশই বিদেশ গিয়েছিলেন ঋণ নিয়ে। যারা এখন পর্যন্ত ঋণ শোধ করতে পারেননি। ৯০ শতাংশ প্রবাসী আবারও আগের দেশে কাজে ফিরে যেতে চান। ৮৪ শতাংশ প্রবাসীর এখনো ওয়ার্ক পারমিট থাকলেও অধিকাংশই নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। প্রবাসীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্ণয়ে উন্নয়ন সংস্থা ইয়াং পাওয়ার অব সোশ্যাল অ্যাকশনের (ইপসা) পরিচালিত গবেষণা জরিপে এসব তথ্য উঠে আসে। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলে। দেশের  জাতীয় রাজস্বের অন্যতম উৎস রেমিট্যান্সযোদ্ধা খ্যাত প্রবাসীদের মধ্যেও পড়েছে এর নেতিবাচক প্রভাব। করোনার আগে এবং করোনাকালে দেশে আসা প্রবাসীরা এখন আর্থিকভাবে বিপর্যন্ত। সচ্ছল প্রবাসীরা কোনো রকম ভালো থাকলেও মধ্যমসারির অবস্থা নাকাল। চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত প্রায় চার লক্ষাধিক অভিবাসী দেশে ফিরেছেন। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, ‘করোনাকালে দেশে আসা অধিকাংশ প্রবাসীই এখন ভালো নেই। প্রবাসের পরিবেশও এখন অনূকুল নয়। তবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সরকার প্রবাসীদের কল্যাণে ৫০০ কোটি টাকার একটি বরাদ্দ ঘোষণা করেছে। জুলাই থেকে এ ব্যাপারে কাজ শুরু হবে।’ জরিপ সূত্রে জানা যায়, অনলাইনে পরিচালিত জরিপে কেবল বিদেশ ফেরতরাই অংশগ্রহণ করেন। জরিপে শতাধিক অভিবাসী তাদের বর্তমান অবস্থা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ৯৫ শতাংশ অভিবাসী আসেন মধ্যপ্রাচ্য (ওমান, সৌদি আরব ও আরব আমিরাত) থেকে। এর মধ্যে অধিকাংশই গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে দেশে ফিরে আসেন বাৎসরিক ছুটি, কাজের অভাব ও করোনা আতঙ্কে। তদুপরি প্রবাসে অনেকে হয়েছিলেন সামাজিক বৈষম্যের শিকার। করোনা ছড়িয়ে পড়ার জন্য তাদের দোষারোপ করা হয়।

অনেকের বাসস্থানে টাঙিয়ে দেওয়া হয় লাল পতাকা।

ইপসার প্রোগ্রাম ম্যানেজার (নিরাপদ শ্রম অভিবাসন) আবদুস সবুর বলেন, ‘জরিপে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা ও রাঙ্গামাটির বিভিন্ন উপজেলার ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী মোট ৭১ জনের তথ্য নেওয়া হয়। জরিপ থেকে বুঝা যায়, দেশে ফিরে আসা অভিবাসীরা ভালো নেই। বিশেষ করে বর্তমানে প্রায় এক লাখ প্রবাসী বিমানের টিকিট থাকার পরও বিদেশে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। এসব বিষয় সরকার প্রণোদনার আওতায় আনলে ভালো হয়। অন্যথায় দেশের রেমিট্যান্সযোদ্ধারা পিছিয়ে পড়বে। এর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।’

জরিপ প্রতিবেদনে করা সুপারিশের মধ্যে আছে, ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসীদের তালিকা করে সরকারের সেফটিনেট প্রোগ্রামের আওতাভুক্ত করে খাদ্যসামগ্রী, নগদ অর্থ সহায়তা ও সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া, যাদের ভিসা ও কাজের মেয়াদ আছে তাদের নিয়োগকর্তার সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দেওয়া, যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ তাদের ভিসা নবায়নের ব্যবস্থা করা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিদেশের কর্মস্থলে যেতে বিনামূল্যে বিমানের টিকিট-ভিসা নবায়ন খরচ ও দুই মাসের জীবিকা নির্বাহে ব্যয়ের ব্যবস্থা করা, দেশে স্থানীয়ভাবে পুনর্বাসনের পরিকল্পনাকারীদের আর্থিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, অভিবাসীদের সামাজিকভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা, করোনার জন্য তাদের দায়ী না করা এবং বিদেশে বিপদগ্রস্ত দেশে ফিরতে ইচ্ছুক প্রবাসীদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা।

সর্বশেষ খবর