শনিবার, ১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

চিকিৎসা প্রস্তুতিতে এক বছরে অগ্রগতি ‘সমানে সমান’

করোনা রোগীর চিকিৎসায় অগ্রগতি আগে যেখানে ছিল সেখানেই

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চিকিৎসা প্রস্তুতিতে এক বছরে অগ্রগতি ‘সমানে সমান’

চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৩ এপ্রিল। প্রথম আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৮ এপ্রিল। চট্টগ্রামে সরকারি তিনটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র করোনা রোগীর চিকিৎসা শুরু করে। কিন্তু এক বছর পার হলেও করোনা রোগীর চিকিৎসায় অগ্রগতি আগে যেখানে ছিল সেখানেই। ফলে করোনার চিকিৎসা প্রস্তুতিতে এক বছরে অগ্রগতি সমানে সমান বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী রোগী ও স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞদের। প্রসঙ্গত, করোনায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অক্সিজেন ও শয্যা সংকটে নাভিশ্বাস উঠেছে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম শক্তিধর দেশটির। এ প্রেক্ষিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে চট্টগ্রামসহ দেশেও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ফলে মানুষের মধ্যে নতুন শঙ্কা-আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে।     

করোনার শুরুতে প্রথমে জেনারেল হাসপাতালের ১০০ শয্যা নিয়ে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। পরে যোগ করা হয় আরও ৫০টি সাধারণ ও ১০টি আইসিইউ শয্যা এবং সেন্ট্রাল অক্সিজেন। গত জুলাই মাসে ১৫০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ডটির আধুনিকায়ন করা হয়। গত বছরের মে মাসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমে ১০০ সাধারণ ও ১০টি আইসিইউ নিয়ে করোনা রোগীর সেবা শুরু হয়। পরে সেখানে আরও ১৫০ শয্যা প্রস্তুত করা হয়। তবে বর্তমানে সেবা দেওয়া হচ্ছে ১৮০ শয্যায়।  বিআইটিআইডিতে চালু আছে ৩২টি সাধারণ শয্যা। তবে এক বছর পর গত ১৭ এপ্রিল থেকে এখানে পাঁচটি আইসিইউ ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাছাড়া জেনারেল হাসপাতালের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে হলি ক্রিসেন্টে ১০০ ও রেলওয়ে হাসপাতালে ৫৪ শয্যা প্রস্তুত রাখার কথা বলা হলেও তা পুরোটাই কাগুজে। পক্ষান্তরে বেহাল অবস্থা চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার। ১৪ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে সেন্ট্রাল অক্সিজেন নেই ছয়টিতে, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা আছে মাত্র তিনটিতে। চট্টগ্রামে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার জন্য এই ছিল করোনা চিকিৎসার প্রস্তুতি। তবে এসব প্রস্তুতি গত বছরের।

জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বর্তমান অবস্থা দেখে দেশের মানুষ আতঙ্কিত। এখনই যদি চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া না হয়, তাহলে হয়তো আগামীতে এর চরম খেসারত দিতে হবে। কারণ গত বছর নগরে প্রায় ১০টি আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত করা হলেও এবার সেগুলো নেই। তাছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সংকট আছে অক্সিজেনের। দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকায় সামনে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই এ মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে সিভিল ও সামরিক প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করা জরুরি।’

ক্যাব চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘করোনা চিকিৎসার প্রস্তুতিতে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিতে হবে। কারণ প্রথম ঢেউয়ের পর মাঝখানে সংক্রমণ কমেছিল। তখন প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ ছিল। সে সুযোগ কাজে লাগিয়েছে বলে মনে হয় না। করোনা চিকিৎসায় হয়নি কাক্সিক্ষত পরিবর্তন। এখন কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হলে কী অবস্থা হবে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।’     

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি দাবি করেন, ‘চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। সরকারি ৯৫০ ও বেসরকারি ৬৫০টি শয্যায় চিকিৎসা চলছে। তাছাড়া সরকারি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ আছে ১২টি, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা           আছে ৪৭টি ও অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর আছে ৫৬টি। পর্যায়ক্রমে চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা মাত্রা যোগ করা হচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।’ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে গত বুধবার এক দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আটজন এবং নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১৮০ জন। গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হন ৪৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে মহানগরে ৩৯ হাজার ৮৮২ জন এবং উপজেলায় ৯ হাজার ৮৪৩ জন। ইতিমধ্যে মারা গেছেন ৫১৬ জন।

 এর মধ্যে মহানগরে ৩৮২ জন ও উপজেলায় ১৩৪ জন। চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি ১০টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর