রবিবার, ৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনাকালে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া

সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জের ছয়টি উপজেলার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন দুই প্রভাবশালী নেতা পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নূরুল হুদা মুকুটের সমর্থকরা।

তাদের দাবি, দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন চলাকালে কোনো পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে ‘ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে’ নিজেদের অনুগত, বহিরাগত ও হাইব্রিডদের স্থান করে দিতে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এম. এনামুল কবির ইমন অন্য সহসভাপতি মুহিবুর রহমান মানিকের সঙ্গে আঁতাত করে কমিটি গঠন করেছেন। ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীতের ক্ষোভ প্রশমন, দলের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কমিটিগুলো অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ সদর, দিরাই, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা এবং ছাতক পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঢাকা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। শুক্রবার স্বাক্ষর করা হয় শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিও।

এদিকে আকস্মিকভাবে ছয় ইউনিটে কমিটি প্রকাশের পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় জেলা আওয়ামী লীগের দ্বিধাবিভক্ত রাজনীতিতে। দৃশ্যত মতিউর-মানিক-ইমন সমর্থকরা প্রাধান্য পান কমিটিতে। আর রাজনীতিতে তাদের প্রতিপক্ষ মান্নান-মুকুট সমর্থকদের খুব একটা জায়গা দেওয়া হয়নি। জেলার রাজনীতির চলমান ‘ছক পরিবর্তনের মাস্টারপ্ল্যান’ দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বঞ্চিতরা। ‘একতরফা’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও পৌরসভা এবং জেলা আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধ নেতারা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। তারা শরণাপন্ন হন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার। অগঠনতান্ত্রিক ও অগণতান্ত্রিক কমিটিগুলো বাতিল চান তারা।

দলীয় সূত্র জানান, দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের জন্য যে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে শুক্রবার উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আছাব উদ্দিন সরদার শেখ হাসিনা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কমিটি গঠনের ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্মসম্পাদক কেউই অবগত নন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি। একইভাবে কমিটি বাতিল চেয়ে দলীয় প্রধানের কাছে আবেদন করেছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী আবুল কালাম, দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ফরিদ আহমদ তারেক ও যুগ্ম আহ্বায়ক শামিমুল ইসলাম শামিম। সূত্রমতে, বাকি উপজেলাগুলো থেকেও কমিটি বাতিল চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে ছয় ইউনিট সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই গঠন করা হয়েছে বলে লিখিতভাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে অবগত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট। দলকে পাশ কাটিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটিগুলো গঠন করেছেন বলে নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফলে যে কোনো সময় সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অতীতেও সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে জামালগঞ্জ ও মধ্যনগর উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরে নেতা-কর্মীদের দাবির মুখে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে কমিটি দুটি বাতিল করা হয়। সম্প্রতি রহস্যজনকভাবে গঠিত কমিটিগুলো বাতিলের দাবি জানান জেলা আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা।

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পথে থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে জেলা সাধারণ সম্পাদক এম. এনামুল কবির ইমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর