মুনিরার মায়ের মরদেহ যখন হাসপাতাল থেকে বের করে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছিল, তখনো মেয়েটি নির্বিকার। যখন তোলা হলো, তখন তার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। শুরু হলো আহাজারি। মা মরা মেয়েকে আটকাতে শত চেষ্টা করছিলেন বাবা রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট এলাকার আবদুর রশীদ। তিনি জানালেন, ভর্তির একদিনের মাথায় তার স্ত্রী রাহেলা বেগম মারা গেছেন। শুরুতে ভেবেছিলেন জ্বর হয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছ থেকে স্ত্রীকে ওষুধ এনে দিয়েছিলেন। যখন অবস্থা চরমে তখন নিয়ে আসেন হাসপাতালে। এসে জানতে পারেন তার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, করোনায় যারা মারা যাচ্ছেন, বেশিরভাগের একই অবস্থা। গ্রামে বসবাস করায় করোনা সম্পর্কে তাদের ধারণা স্পষ্ট নয়। সে কারণে নমুনা পরীক্ষা বা চিকিৎসায় খুব বেশি আগ্রহী হন না। যখন অবস্থা সংকটাপন্ন হয় তখন হাসপাতালে আসেন। রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব পর্যালোচনা করলেও বিষয়টি স্পষ্ট। নগরীতে করোনা পরীক্ষা বাড়লেও, পরীক্ষা বাড়েনি গ্রামে। গ্রামে গ্রামে মৃত্যু যখন চোখ রাঙাচ্ছে, তখনো পরীক্ষা হাতে গোনা। রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব মতে, গত জুন মাসে রাজশাহী জেলায় করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৮ হাজার ২১৯ জনের। এরমধ্যে করোনা পজেটিভ হয়েছেন ৮ হাজার ৪৬৭ জন। গেল জুন মাসে রাজশাহী জেলায় মোট পরীক্ষা হয়েছে ৩৮ হাজার ২১৯ জনের। এরমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষা হয়েছে ৬৩৮ ব্যক্তির। করোনা পজেটিভ হয়েছে ১ হাজার ৩৬৩ জন। মোট পরীক্ষায় উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষার হার ১৫.৭৯ শতাংশ। গত জুন মাসে উপজেলা পর্যায়ে করোনার র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে ২৬দিন। গেল মাসে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটিতে করোনা পরীক্ষা বন্ধ থাকায় ৪ দিন পরীক্ষা হয়নি। ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন গড়ে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৩২টি। মোট ৯ উপজেলার হিসাব গড় করলে প্রতিদিন একেকটি উপজেলায় পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ২৬ জনের। জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করছেন, গ্রামে নগণ্য সংখ্যক পরীক্ষা হওয়ায় মনে হচ্ছে আক্রান্তের হার কম। একই সঙ্গে গ্রামের মানুষের মধ্যে চিকিৎসা পদ্ধতি ও করোনা নিয়ে ধারণা না থাকায় মৃত্যু হার বেড়েছে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো গেলে পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব হতো। তবে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও মৃত্যু হার থেকে অনুমান করা হচ্ছে সংক্রমণ আগের চেয়েও দ্রুত গতি পেয়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, ‘যেখানে হাতে গোনা টেস্ট, সেখানে কীভাবে বলা সম্ভব হয় সংক্রমণ কমছে। আগে টেস্ট বাড়াতে হবে। তারপর দেখতে হবে ধারাবাহিকভাবে সংক্রমণ কমছে কি না।’