চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি হাসপাতালের সবগুলো শয্যাতেই রোগী ভর্তি আছে। কেবল আইসিইউ নয়, সাধারণ শয্যাও মিলছে না সহজে। বরং প্রতিদিন হাসপাতালগুলো থেকে শয্যা না পেয়ে অন্তত ১০০ রোগী ফেরত যাচ্ছে। ফলে চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় চরম বিপর্যস্ত অবস্থা তৈরি হয়েছে। শয্যার জন্য চলছে হাহাকার। প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ করে এবং মারা যাচ্ছেন ৯ থেকে ১০ জন। জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০ শয্যার করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড হলেও অন্তত ৩০ জনকে শয্যার বাইরে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরেও প্রতিদিন ফেরত দিতে হয় রোগী। জেনারেল হাসপাতালে ১৮০টি শয্যা থাকলেও সবগুলোতে রোগী ভর্তি। তবে এ হাসপাতালের সহযোগী হিসেবে হলি ক্রিসেন্টেও রোগী ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থায় ঘাটতি আছে। চট্টগ্রামে বেসরকারি বৃহত্তম মা ও শিশু হাসপাতালে ১৮০ শয্যার আইসোলেশন ও ২১ শয্যার আইসিইউ থাকলেও প্রতিদিন অন্তত ৩০ জনের বেশি রোগী ফেরত যাচ্ছে। পক্ষান্তরে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যা আছে ১১৯টি, হাই ফ্লো ন্যাজল ক্যানুলা আছে ১২৪টি, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে ২৪টি এবং ভেন্টিলেটর আছে চারটি। এরপরও চলছে চরম সংকট। অন্যদিকে, মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশন শয্যা ৪১টি ও আইসিইউ ১০টি, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিআইএমসিএইচ) আইসোলেশন শয্যা ছিল ১২০টি ও ছয়টি করোনা স্পেশালাইজড এইচডিইউ ও আইসিইউ শয্যা। চট্টগ্রামে করোনা মোকাবিলায় গঠিত বিভাগীয় সার্ভিল্যান্স টিমের প্রধান ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মিজানুর রহমান বলেন, সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজগুলোর হাসপাতাল এবং সাধারণ হাসপাতালগুলোতে সরকারি নির্দেশনা মতে শয্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
রোগী রাখার জায়গা নেই বরিশাল শেবাচিমে : বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ওয়ার্ডে ৩০০ শয্যার বিপরীতে গতকাল রোগী ভর্তি ছিল ৩৪৯ জন। বিগত ২৪ ঘণ্টায় এই ওয়ার্ডে মারা গেছে ১৫ জন রোগী। দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এখন আর রোগী রাখার জায়গা নেই শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ডে। পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কায় ১০০ শয্যার বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল (সদর) বিশেষায়িত করোনা হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। এই হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ করে রোগীদের পাঠানো হচ্ছে শেরেবাংলা মেডিকেলের সাধারণ ওয়ার্ডে। এদিকে করোনা উপসর্গ ও আক্রান্ত গর্ভবতী এবং দুগ্ধদায়ী মায়েদের জন্য বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ২০ শয্যার বিশেষায়িত করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। অপর দিকে সচ্ছল রোগীদের জন্য নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালও বিশেষায়িত করোনা হাসপাতালে পরিণত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। গতকাল দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের এক মতবিনিময় সভায় জানানো হয় এসব তথ্য। সভায় জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, বরিশাল বিভাগের বাইরের বাগেরহাট, মাদারীপুর, শরীয়তপুর এবং গোপালগঞ্জ থেকেও শেরেবাংলা মেডিকেলে রোগী পাঠানো হচ্ছে। ওইসব জেলায় করোনা চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো হলে শেবাচিম হাসপাতালে রোগীর চাপ কমবে। একই সঙ্গে বিত্তবানদের জন্য নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হলে শেবাচিমে রোগীর চাপ কিছুটা হলেও কমবে বলে তিনি জানান। বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, জেনারেল হাসপাতালে জনবলে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও ১০০ রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছেন। সেখানে ১০০ রোগীকে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। জেনারেল হাসপাতালে শিগগিরই ৫ শয্যার একটি আইসিইউ ইউনিট করার চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান। করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করায় জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০টি করে মোট ১৮০টি শয্যা করোনা উপসর্গ ও আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে সিভিল সার্জন জানান। শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, উপসর্গহীন অনেক ব্যক্তি নিজের অজান্তে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের মাধ্যমে অন্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। এ কারণে করোনা প্রতিরোধের জন্য সবাইকে মাস্ক পরিধান, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, বারবার স্যানিটাইজার মাখা এবং সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়ার পরামর্শ দেন তিনি। মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, শেরেবাংলা মেডিকেলের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) প্রশান্ত কুমার দাসসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।