মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

সিসিক-পিডিবি মুখোমুখি

ভূগর্ভস্থ লাইনের জন্য ৪৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চায় সিসিক * বকেয়া ২২ কোটি টাকার জন্য চাপ পিডিবির

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে পাওনা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বিদ্যুৎ বিল বাবদ সিসিকের কাছে পিডিবির পাওনা প্রায় ২২ কোটি টাকা। বকেয়া পাওনা আদায়ে সিসিককে চাপ দিচ্ছে পিডিবি। পক্ষান্তরে মহানগরে ভূগর্ভস্থ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের সময় রাস্তা কাটার ক্ষতিপূরণ বাবদ পিডিবির কাছে ৪৫ কোটি টাকা দাবি করছে সিসিক। পিডিবির দাবি, বকেয়া বিল পরিশোধ না করতেই অহেতুক ক্ষতিপূরণের টাকা দাবি সিসিকের।

সিসিক-সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় সাড়ে ১৪ কিলোমিটার বিদ্যুতের আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল (ভূগর্ভস্থ লাইন) স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপদ বিদ্যুতায়ন ও মাটির ওপরস্থ তারের জঞ্জাল থেকে মুক্তি পেতে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পিডিবি। আগামীতে আরও ২৫ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক তার স্থাপন করা হবে মহানগরে। সিসিক বলছে, সাড়ে ১৪ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক তার স্থাপনে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে মহানগরের ব্যস্ততম সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারে সব মিলিয়ে সিসিকের ব্যয় হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। যেহেতু কাজ করেছে পিডিবি তাই সংস্কারের এ টাকা তাদেরই দেওয়ার কথা। ক্ষতিপূরণের এ ৪৫ কোটি টাকা চেয়ে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে সিসিক। এদিকে সিসিকের কাছে বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রায় ২২ কোটি টাকা পাওনা পিডিবির। এ বকেয়া আদায়ে পিডিবি চাপ দিচ্ছে সিসিককে। বছরের পর বছর ধরে বিল পরিশোধ না করায় একপর্যায়ে পিডিবির বকেয়া পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৩২ কোটি টাকায়। পিডিবির চাপে চলতি বছরে দুই দফায় ১০ কোটি টাকা পরিশোধ করে সিসিক। বর্তমানে বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি টাকায়। পিডিবি-সূত্র জানান, ওয়ান-ইলেভেনের সময় সিসিক সব বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে। এর পর থেকে বিল বকেয়া পড়তে থাকে। বারবার তাগিদ দিয়ে চিঠি পাঠালেও অর্থ সংকটের কথা বলে বিল পরিশোধ থেকে বিরত থাকে সিসিক। ফলে বকেয়া বিল জমে পাহাড়সম হয়। বকেয়া বিল ও ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল প্রকল্প বাস্তবায়নে রাস্তার অনেক ক্ষতি হয়েছে। অ্যাসফল্ট রাস্তা কেটে বিদ্যুতের তার মাটির নিচ দিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের শুরুতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল পিডিবিকে সহযোগিতা করা হবে। কিন্তু এত বড় অঙ্কের ক্ষতি সিসিকের পক্ষে একা পুষিয়ে নেওয়া কষ্টসাধ্য। তাই পিডিবির কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণের টাকা আলোচনা সাপেক্ষে হয়তো পুনর্নির্ধারণ করা যেতে পারে।’ নূর আজিজ বলেন, ‘নগরবাসী ঠিকমতো পানির বিল ও হোল্ডিং ট্যাক্স দেন না। এগুলো নিয়মিত পেলে বিদ্যুৎ বিল এত বকেয়া পড়ত না।’ পিডিবি সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কাদির বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের কাছে পিডিবি বিল বাবদ ২২ কোটি টাকা পাবে।

এখন বকেয়া পরিশোধ না করে উল্টো ক্ষতিপূরণ চাচ্ছে সিসিক। বকেয়া বিল পরিশোধের বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিতেই তারা এমন করছে। আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ লাইন প্রকল্পের শুরুতে সিসিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সহযোগিতার। কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ লাগবে না বলে প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের আশ্বস্ত করেছিল। এখন টাকা দাবি করছে। প্রকল্পে রাস্তার ক্ষতিপূরণ বাবদ কোনো বরাদ্দই নেই। তাই সিসিকের অযৌক্তিক এমন দাবি পূরণ সম্ভব হচ্ছে না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর