পরিবেশ অধিদফতরের মতে, বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার দৈনিক আদর্শ মান ৬৫ মাইক্রোগ্রাম। কিন্তু বর্তমানে চট্টগ্রামে বায়ুর মান ১৬৫ দশমিক ৩১ মাইক্রোগ্রাম। আদর্শ মান থেকে আড়াই গুণ বেশি। ফলে চট্টগ্রাম এখন ধুলায় ধূসর নগরে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। চলছে সিডিএর নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প ও লালখানবাজার-বিমান বন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, ওয়াসার চট্টগ্রাম মহানগরের পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প। আছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বছরজুড়ে অপরিকল্পিত সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন। এর মধ্যে নগরীর পোর্ট কানেকটি রোড, সদরঘাট হতে মাঝিরঘাট বাংলাবাজার-রশিদ বিল্ডিং, কদমতলী শুভপুর বাসস্ট্যান্ড-বারিক বিল্ডিং, বারিক বিল্ডিং-কাস্টমস মোড়, বহদ্দারহাট হতে কাপ্তাই রাস্তার মাথা হয়ে কালুরঘাট, দেওয়ানহাট-ঈদগাহ কাঁচা রাস্তা মোড় ও পাহাড়তলী বাজার থেকে অলংকার (ডিটি রোড), কদমতলী-ধনিয়ালাপাড়া-দেওয়ানহাট, নতুন ব্রিজ-মেরিনার সড়কের পুরাতন ফিসারিঘাট ব্রিজ পর্যন্ত, চকবাজার কাঁচাবাজার হতে রাহাত্তারপুলসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে উড়ছে ধুলাবালি। আছে, বিদ্যুৎ, কর্ণফুলী গ্যাস, বিটিসিএলসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি, যা নিয়মিতই চলে। আছে শিল্পকারখানার কালো দূষিত ধোঁয়া। এসব প্রকল্পে প্রতিনিয়তই উড়ছে দূষিত ধুলাবালি। ধুলাবালি দূষণ করছে নগরের পরিবেশ। চসিক গত বছরের ১৮ অক্টোবর থেকে নগরে পানি ছিটানোর জন্য দুটি গাড়ি নামায়। কিন্তু এগুলো এখন আর দেখা যায় না।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিকুল মাওলা বলেন, দূষিত ধুলাবালির কারণে বহুমাত্রিক সমস্যা তৈরি হয়। এর মধ্যে আছে একজিমা, ছত্রাক, ব্যাকটেরিজনিত সংক্রমণ। তাছাড়া, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এবং ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকে ফুসফুস আক্রান্ত হয়। আর ফুসফুস শরীরের অতিগুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আক্রান্ত হলে মানুষ ঝুঁকিতে পড়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোকে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম নগরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হক বলেন, নগরে ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদফতর নিয়মিত অভিযান ও নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বিশেষ করে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে তদাররি করা হয়। এরই মধ্যে বাস টার্মিনাল মোহরা সড়ক, হালিশহর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে ধুলাবালি ওড়ার কারণে প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করা হয়েছে।
চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক বলেন, ধুলাবালির সড়কে পানি ছিটাতে নগরে দুটি গাড়ি নিয়মিত কাজ করে। তবে গাড়ির তুলনায় সড়ক বেশি। তাই হয়তো ধুলাবালি বেশি দেখা যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, ধুলাবালির দূষণ মানবশরীরে অতিরিক্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘৬৪ জেলার বায়ুদূষণ সমীক্ষা ২০২১’ শীর্ষক এক সমীক্ষা উপস্থাপন করে বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। ক্যাপসের ৮১ সদস্যের একটি গবেষক দল দেশের ৬৪ জেলার ৩ হাজার ১৬৩ স্থানের বায়ুর অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ পরীক্ষা করে এই সমীক্ষাটি তৈরি করে। সমীক্ষায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, মেগা প্রকল্প, ইটভাটা, শিল্পকারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া, ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো প্রভৃতি বিষয়গুলোকে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পক্ষান্তরে বায়ুদূষণ কম হওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান, প্রচুর পরিমাণ গাছপালা, প্রাকৃতিক জলাধার থাকার কথা বলা হয়েছে।