তৈরি পোশাক খাতের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় দাবি করেছেন তৈরি পোশাক শিল্পমালিকরা। অনিয়ন্ত্রিত কারণে কোনো প্রতিষ্ঠান রুগ্ণ হলে, ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং মালিকের জন্য একটি কার্যকর এক্সিট নীতিমালাও চেয়েছেন তাঁরা। গতকাল একটি হোটেলে আসন্ন বিজিএমইএ নির্বাচনের ফোরাম প্যানেলের নেতারা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন।
এ সময় ফোরাম নেতারা একটি স্বচ্ছ, কার্যকর, গতিশীল ও জবাবদিহিমূলক বিজিএমইএ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। সংগঠনটির নেতারা বলেন, পোশাক মালিক-উদ্যোক্তারা সংগঠনটির নেতৃত্ব দিলে, এ খাতের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠাসহ ৯ দফা অগ্রাধিকার নিয়ে কাজ করবেন তাঁরা। টেকসই পোশাক খাতের জন্য একটি শক্তিশালী বিজিএমইএ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্যানেল লিডার মাহমুদ হাসান খান বাবু। এ সময় সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন ফোরাম নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে ফোরাম মহাসচিব ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী, প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক ফয়সাল সামাদসহ প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাত থেকে প্রায় ৮৪ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এই শিল্প ৪৫ বছরের বেশি সময় ধরে টিকে থাকলেও এখনো কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও টেকসই উন্নয়নে পুরোপুরি সফল হতে পারেনি। বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে বিজিএমইএর শিল্পের স্বার্থ রক্ষায় শক্তিশালী ও পেশাদার ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা সদস্যদের। এমন বাস্তবতায় আজ পোশাকশিল্পের সব উদ্যোক্তা একটি স্বচ্ছ, গতিশীল, কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক বিজিএমইএ গঠনের জোর দাবির সঙ্গে আমাদের সংগঠন ফোরাম একাত্মতা প্রকাশ করছে।’
দক্ষ, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক বিজিএমইএ গড়ে তুলতে বিজিএমইএকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘৪৫ বছরের বেশি সময়ের যাত্রায়, এখনো পোশাক খাত টেকসই হয়ে ওঠেনি। বিজিএমইএর যতটা শক্তিশালী ভূমিকা রাখার কথা সেটি বিগত দিনে হয়নি। উল্টো একটি গোষ্ঠী সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছে। এবার একটি গ্রহণযোগ্য ভোটার তালিকা পাওয়া গেছে। ফোরামের পক্ষ থেকে আমরা সব সময় সংগ্রাম করে গেছি একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ভোটের আয়োজন করতে। আমরা মনে করি, এবার মালিকদের আশার প্রতিফলন ঘটবে।’
প্যানেল লিডার মাহমুদ হাসান খান বাবু আরও বলেন, ‘ফোরাম থেকে ৩৫ পরিচালক পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। ব্যবসা রয়েছে এমন উদ্যোক্তা, তরুণ নেতৃত্ব, দূরদর্শিতা ও অভিজ্ঞতা এসব বিবেচনা করে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। আমাদের প্রার্থীরা পর্ষদে এলে, তাঁদের হাতে নতুন বিজিএমইএ গড়ে উঠবে। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে আগামীর পথে পোশাক খাতকে নিয়ে যেতে চাই।’
পোশাক খাতের অগ্রযাত্রা, উন্নয়ন ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য একটি আলাদা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠাসহ ৯টি কৌশলগত প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ফোরাম নেতারা। অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বাড়তি নীতিসহায়তা নিশ্চিত করা, ব্যাংক ও কাস্টমস হয়রানি নিরসন, রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশেষ নীতিসহতায় আদায়, অনিয়ন্ত্রিত কারণে রুগ্?ণ প্রতিষ্ঠানের এক্সিট পলিসি চূড়ান্ত করা। এবার এমন একটি প্যানেল দেওয়া হয়েছে, যারা কেবল পরিচালক হতে পর্ষদে আসতে চান না। শিল্পের জন্য কাজ করবে, কার্ডধারী পরিচালক কিংবা বিজিএমইএ আর দলীয় কার্যালয় হবে না। মালিকদের সমস্যা সমাধানে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেল অঞ্চলভিত্তিক গড়ে তোলা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিগত দিনে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বেশ কিছু উদ্যোক্তা পলাতক আছেন। অনেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তাঁরা কেউ বিজিএমইএ সভাপতি হিসেবে এই পরিস্থিতিতে পড়েননি। তাঁরা ব্যক্তিগত কর্মের কারণে এ অবস্থায় আছেন। তবে আইনে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগে কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে না। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ মুহূর্তে পোশাকশিল্প সম্পর্কিত যে কোনো সমস্যার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখাপেক্ষী হতে হয়। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অনেক বিষয়ের কারণে ব্যাপক সময় ব্যয় করতে হয়।