শিরোনাম
সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

বুড়িগঙ্গায় অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করে রাখা বরিশাল রুটের অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চে ভয়াবহ আগুন লাগে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সাতটি ইউনিটের মাধ্যমে আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে লঞ্চটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার অধিকাংশ কেবিন পুড়ে গেছে। তবে এর কয়েক ঘণ্টা আগেই যাত্রীরা লঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। খালি লঞ্চে আগুনের ঘটনা ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন লঞ্চ মালিক পক্ষ। এর আগে, ২২ মার্চ বরিশাল নদীবন্দরে অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চে নৌ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। ওই মহড়ায় অগ্নিনির্বাপন, আগুন থেকে জানমাল রক্ষায় করণীয় ও উদ্ধার বিষয়ে লঞ্চের কর্মী এবং যাত্রীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয় ফায়ার সার্ভিস। এর মাত্র পাঁচ দিন পর গতকাল ঢাকার সদরঘাটে দুর্ভাগ্যক্রমে ওই লঞ্চেই ঘটল আগুনের ঘটনা।

এদিকে আগুনের কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য ফায়ার সার্ভিস এবং বিআইডব্লিউটিএ পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সদরঘাট নদী বন্দরের ৩ নম্বর পন্টুনে নোঙর করা অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ভিআইপি জোন থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন। মুহূর্র্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এ সময় ওই লঞ্চের কর্মীরা এবং পাশে নোঙর করা অপর লঞ্চের কর্মীরা তাদের স্ব স্ব লঞ্চের হোস পাইপ দিয়ে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। ততক্ষণে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে।

এক পর্যায়ে ওই লঞ্চের পাশে নোঙর করা অন্য লঞ্চগুলো নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। বেলা পৌনে ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। একই রুটের অন্য লঞ্চের কর্মীরা জানান, আগুন লাগার পর ওই লঞ্চের ভিতরে কাউকে যেতে দেওয়া হয়নি। এ কারণে আগুনের সূত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তারা কিছু জানতে পারেননি। তবে কেউ হতাহত হয়নি বলে প্রাথমিকভাবে তারা নিশ্চিত করেছেন।

লঞ্চের মালিক নিজাম উদ্দিন মৃধা মুঠোফোনে বলেন, যাত্রীরা সকাল ৭টার মধ্যে লঞ্চ থেকে নেমে যায়। খালি লঞ্চের ভিআইপি জোনে আগুন লাগার কোনো সুযোগ নেই। এটি অবশ্যই চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র বলে সন্দেহ করছেন তিনি। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন লঞ্চের মালিক নিজাম মৃধা। প্রাথমিকভাবে লঞ্চের ক্ষয়ক্ষতির কোনো পরিমাণ জানাতে পারেননি তিনি।

লঞ্চের কেরানি আবদুস সালাম জানান, সকালে যাত্রী নামানোর পর আমরা ধোয়া-মোছার কাজ করছিলাম। হঠাৎ করেই ধোঁয়া দেখতে পাই দ্বিতীয় তলায়। সম্ভবত ক্যান্টিন থেকে আগুনটা লেগেছে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় তলা থেকে তৃতীয় তলায়। লঞ্চটির কেবিনগুলোতে কাঠের জিনিসপত্র ও তুলা বেশি থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।  তবে কোনো স্টাফ বা অন্য কেউ হতাহত হয়নি।

সদরঘাট নৌ পুলিশের এসআই মো. শহিদুল আলম জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় আমরা খবর পাই লঞ্চে আগুন লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে এসে দেখি লঞ্চে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে স্থানীয়রা সহযোগিতা করলে বেলা ১টার সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ওহিদুল ইসলাম জানান, সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে আমরা আগুনের খবর জানতে পারি। ১০টা ৫৬ মিনিটে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। আমাদের ৭টি ইউনিটের ৯৯ জন কর্মী আগুন নিভাতে কাজ করে। বেলা ১টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনের ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পর আগুনের আসল কারণ সম্পর্কে জানা যাবে।

নৌ পরিবহন অধিদফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (সিপ সার্ভে) মো. মাহাবুব হোসেন জানান, দ্বিতীয় তলার ভিআইপি কেবিন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, হয়তো বা এসির গ্যাস লাইন, কিংবা অন্য কিছু থেকেও আগুন লাগতে পারে।

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগ) সেলিম রেজা জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটি নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের হেফাজতে রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (উন্নয়ন) নূর হাসান আহমেদকে সভাপতি; সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসারকে সদস্য; ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর দোলন আচার্য সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সের অ্যাডজুটেন্ট ইকবাল বাহার বুলবুলকে সদস্য সচিব করে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর