শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

বন্ধ চিনিকলের নীরব কান্না

১৬ মাসেও সিদ্ধান্ত হয়নি চিনিকলের যন্ত্রপাতির ব্যাপারে

নজরুল মৃধা, রংপুর

রংপুরের শ্যামপুর চিনিকলের জং ধরা যন্ত্রপাতির ব্যাপারে ১৬ মাসেও সিদ্ধান্ত হয়নি। এসব যন্ত্রপাতি ও যানবাহন পাহারা দেওয়ার জন্য রয়েছে হাতেগোনা কয়েকজন গার্ড এবং দু-একজন কর্মকর্তা। প্রায় একই অবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া অন্য চিনিকলগুলোরও। চিনিকলগুলো বন্ধের ১৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রংপুরের শ্যামপুর সুগারমিল, পাবনা সুগার মিল, পঞ্চগড় সুগার মিল, সেতাবগঞ্জ সুগারমিল, রংপুর সুগার মিল ও কুষ্টিয়া সুগার মিলে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চিনি উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে সময় সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যেই কারখানাগুলো আপাতত বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানালেও এখন পর্যন্ত চিনিকলগুলো চালুর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রস্তাবনা পাঠালেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রংপুরের শ্যামপুর চিনিকল বন্ধ হওয়ার সময় ৪৪৭ জন শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করত। বর্তমানে একজন এমডিসহ মোট ৪০-৫০ জনের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে কিছু গার্ড রয়েছে শুধু পাহারা দেওয়ার জন্য। এ ছাড়া কুকারসহ প্রায় ২০-২৫ জনের মতো কর্মচারী রয়েছেন। দিনের বেলাতেই চিনিকলে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। রাতে থম থমে অবস্থা। স্থানীয়দের দাবি এর মধ্যে বেশকিছু তার ও যন্ত্র চুরি হয়ে গেছে। তবে দায়িত্বরত কর্মকর্তা চুরির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ১৯৬৪ সালে ১১১ দশমিক ৪৫ একর জমির ওপর নির্মিত হয় শ্যামপুর সুগার মিল। ১৯৬৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আখ মাড়াই শুরু হয় মিলটিতে। দৈনিক আখ মাড়াইয়ের সক্ষমতা রাখা হয় ১ হাজার ১৬ টন। বছরে তিন মাস মিল চালু থাকত। মিলটি শুরু থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত লাভজনক ছিল। ২০০০ সালের পর থেকে টানা  লোকসানের মুখে পড়ে মিলটি। ব্যাংক ঋণ, ঋণের সুদ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ অন্যান্য খাত মিলে শেষ পর্যন্ত লোকসান বেড়ে হয় ৫০৫ কোটি টাকা। এ পরিস্থিতিতে শিল্প, বাণিজ্য, অর্থ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি মিলটির মাড়াই কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করে। এ কারণে মিলের কার্যক্রম বন্ধ করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন। কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অদক্ষ জনবল ও অব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে  লোকসানের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় চিনিকলগুলোর এই অবস্থা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শ্যামপুরের আখ চাষি সামছুজ্জামান জানান, সরকারি সিদ্ধান্তে বন্ধ মিলগুলো চালুর উদ্যোগ নেই। ফলে মিল এলাকায় আখের উৎপাদন কমে গেছে। মিলের কিছু তার ইতোমধ্যে চুরি  হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। শ্যামপুর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ আহসান হাবিব জানান, পড়ে থাকা যন্ত্রপাতিতে জং ধরা শুরু করেছে। প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও মিলের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যন্ত্রপাতি চুরির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর