বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

৭ লাখ মানুষ পেয়েছে বিনা খরচে আইনি সেবা

আজ জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস

আরাফাত মুন্না

১৯৯৮ সালে দিলিপ ভট্টাচার্যের কাছ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ জমি কেনেন মানিকগঞ্জের স্কুল শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ কবিরাজ। পরে প্রতিবেশী লালমোহন সাহা অগ্রক্রয়ের মামলা করেন। নিম্ন আদালত থেকে হাই কোর্ট পর্যন্ত মামলা চলে ১৯ বছর। হেরে যান রবীন্দ্রনাথ কবিরাজ। অর্থের অভাবে আপিলও করতে পারেননি। দিন পার করছিলেন উচ্ছেদের শঙ্কা নিয়ে। পত্রিকা ও পোস্টার দেখে দ্বারস্থ হন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির কাছে। দ্রুত আইনজীবী নিয়োগের পর সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে লিগ্যাল এইড কমিটি। হাই কোর্টের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশও মেলে। বিনা খরচে আপিল বিভাগের এই আদেশ পেয়ে এখন খুশি ৬১ বছর বয়সী রবীন্দ্রনাথ কবিরাজ। শুধু রবীন্দ্রনাথ কবিরাজ নয়, গত ১৩ বছরে এমন ৭ লাখেরও বেশি মানুষকে বিনা খরচে আইনি সহায়তা দিয়েছে জাতীয় আইনগত প্রদান সংস্থা। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে সেবাগ্রহণকারী রবীন্দ্রনাথ কবিরাজের মেয়ে জয়ন্তী সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০১৬ সালে আমরা যখন হাই কোর্টে হেরে যাই, তখন সবকিছু যেন অন্ধকার দেখছিলাম। এটাই আমার বাবার শেষ সম্বল। আমাদের কাছে আপিল করার মতো টাকাও ছিল না। কবে উচ্ছেদ করতে আসবে শুধু এটাই ভাবছিলাম। তিনি বলেন, একবার লিগ্যাল এইডের বিষয়ে পত্রিকায় নিউজ দেখেছিলাম। আবার একটি পোস্টারেও দেখেছিলাম এখানে নাকি ফ্রিতেই মামলা চালানো হয়। এসব দেখে গিয়েছিলাম সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইড অফিসে। এরপর থেকে আমাদের আর কোনো কিছুই করতে হয়নি। সবকিছু ওই অফিস থেকেই করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে এ বছর মার্চ পর্যন্ত ৭ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৯ জনকে আইনি সেবা দিয়েছে। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে ২৪ হাজার ২৬৮ জনকে, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫৬ জনকে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেলের মাধ্যমে ২৪ হাজার ৯০৬ জনকে এবং সরকারি সহায়তায় জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টারের মাধ্যমে ১ লাখ ৪০ হাজার ১১৯ জনকে আইনগত সেবা দেওয়া হয়েছে।

সংস্থার প্রতিবেদন দেখা যায়, সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮১০ জনকে আইনি পরামর্শ এবং ৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৩২ জনকে মামলায় আইনগত সহায়তা দিয়েছে সংস্থাটি। মামলা না করে এডিআর (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৫৬ হাজার ৮৭৪টি বিরোধ। এ ছাড়া সংস্থাটি ক্ষতিগ্রস্ত বিচারপ্রার্থীদের ৮৮ কোটি ৪০ লাখ ৬৫ হাজার ১৫৩ টাকাও আদায় করে দিয়েছে।

অন্যদিকে, ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪৭৭টি মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৪৭টি। ২০ হাজার ৬৮০ জনকে আইনী পরামর্শও দিয়েছে এ কমিটি।

জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসটিকে কেন্দ্র করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এ ছাড়া সারা দেশে জেলাপর্যায়ে র‌্যালি, আলোচনা সভা, পথ প্রচার, লিগ্যাল এইড মেলা, ক্লায়েন্ট-আইনজীবী যৌথ সভা, সেরা প্যানেল আইনজীবী পুরস্কার, ম্যাগাজিন/স্যুভেনির প্রকাশসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

দিবসটিকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির পক্ষ থেকেও পৃথক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম স্বপ্ন ছিল সবার জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সুবিচার নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০০ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন প্রণয়ন করে। এই আইনের আওতায় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে ২০০১ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে থমকে যায় এই কার্যক্রম। আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে আবার এ কার্যক্রম শুরু হয়। সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে এই সেবা পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান মন্ত্রী।

জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে বিনামূল্যে অসহায়দের আইনি সেবা দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সরকারি আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা (লিগ্যাল এইড)। রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার অফিসসহ ৬৪টি জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বিনামূল্যে আইনি সহায়তা নিতে প্রতিদিন জাতীয় হেল্প লাইন কলসেন্টারের ‘১৬৪৩০’ নম্বরে বা সরাসরি যোগাযোগ করছেন বিচারপ্রার্থীরা। অনেক অসহায় নারীই পুনর্বাসিত হয়ে ফিরে পেয়েছেন দাম্পত্য জীবন ও সংসার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর