সোমবার, ৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

সিলেটে শত কোটি টাকার ব্যবসা

ঈদের ছুটিতে ২ লাখ পর্যটক সমাগম * গড়েছে নতুন রেকর্ড

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে শত কোটি টাকার ব্যবসা

সিলেটে ঈদের ছুটিতে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট খাতে প্রায় শত কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। ঈদের দিন বিকাল থেকে গত শনিবার পর্যন্ত পাঁচ দিনে সিলেটে ২ লাখের ওপরে পর্যটক সমাগম হয়েছে। এবার যে পরিমাণ পর্যটক সমাগম হয়েছে, তা অতীতে আর কোনো বছর হয়নি বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে জাফলংয়ে পর্যটকদের সঙ্গে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটলে আরও বেশি পর্যটক সমাগম ঘটত বলে দাবি করছেন তারা। প্রতিবছর ঈদ বা যে কোনো সরকারি ছুটিতে সিলেটে পর্যটকদের ঢল নামে। কিন্তু করোনার কারণে গেল দুই বছরে চার ঈদে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটকদের দেখা মিলেনি। ফলে পর্যটন- সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় অনেকটা স্থবিরতা নেমে আসে। গেল দুই বছর এ খাতের ব্যবসায়ীদের গুনতে হয় লোকসান। কিন্তু এ বছর করোনার বিধিনিষেধ না থাকায় এবং ঈদুল ফিতরে লম্বা ছুটি থাকায় আগেভাগেই ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি সেরে রাখেন। ঈদের দিন থেকে কাঙ্খিত পর্যটক সমাগমও শুরু হয়। অনেকে ঈদের অন্তত ১৫ দিন আগেই বুকিং দিয়ে রাখেন হোটেল। বিশেষ করে যারা পরিবার নিয়ে সিলেটে বেড়াতে এসেছেন তারা হোটেল নিশ্চিত করেই আসেন। ঈদের দিন বিকাল থেকেই সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো পর্যটকদের পদচারণায় সরগরম হয়ে ওঠে। এদিকে যারা হোটেল বুকিং না দিয়ে সিলেটে বেড়াতে আসেন, তাদের বেশির ভাগকেই পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। সিলেটে এসে অনেকে হোটেলে সিট না পেয়ে দিনের মধ্যে সফর শেষ করে রাতে ফিরে যান মৌলভীবাজার কিংবা শ্রীমঙ্গলে। ঈদের দিন থেকে গত শনিবার পর্যন্ত সিলেটের সব কটি পর্যটন কেন্দ্রে ছিল পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। হোটেল সংকটের পাশাপাশি সিলেটের সব কটি রেস্টুরেন্টে ছিল পর্যটকদের ভিড়। বিশেষ করে দুপুর ও রাতে রেস্টুরেন্টগুলোতে ছিল পর্যটকে ঠাসা। খাবার সরবরাহ করতে গিয়ে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়। পর্যটক সমাগম বেশি হওয়ায় পরিবহন শ্রমিকরাও সুযোগ বুঝে বাড়িয়ে দেন ভাড়া। বছরের অন্য সময় সিলেট থেকে জাফলং যাতায়াত বাবদ মাইক্রোবাস ভাড়া আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা নিলেও ঈদের সময় তারা আদায় করেন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। একইভাবে সব পর্যটন কেন্দ্রে যাতায়াত ভাড়া দেড় থেকে দ্বিগুণ আদায় করেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নৌকার ভাড়াও আদায় করা হয় বাড়তি। জাফলংয়ে ধলাই নদী পারাপারে পর্যটকপ্রতি ৫০ টাকা করে ভাড়া আদায় করেন মাঝিরা। একইভাবে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয় ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, রাতারগুল, বিছানাকান্দিসহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রেও। সিলেট হোটেল মোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সুমাত নূরী জুয়েল জানান, গেল দুই বছর করোনার কারণে পর্যটন খাতের ব্যবসায় ধস নেমেছিল। এবার অনেক ভালো ব্যবসা হয়েছে। পর্যটন-সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা বেশ চাঙা ছিল। তিনি জানান, সিলেটে প্রায় ৫০০ হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে। এবার ঈদে প্রায় সবগুলোই পর্যটকে ভরপুর ছিল। সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি এ টি এম শোয়েব জানান, এবার সিলেটে প্রায় ২ লাখ পর্যটক সমাগম হয়েছে। এত পর্যটক নিকট অতীতে আর হয়নি। পর্যটন খাতের উন্নয়ন করা গেলে পর্যটকদের সিলেটমুখী করে রাখা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি। পর্যটন সংশ্লিষ্ট একাধিক খাতের ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এবার ঈদের ছুটিতে সকল খাত মিলিয়ে অন্তত ১শ’ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। তবে জাফলংয়ে পর্যটকদের সাথে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পর্যটকদের উপর হামলার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ায় সপরিবারে সিলেট আসা অনেক পর্যটক জাফলংমুখী হননি।

অনেকে জাফলং বেড়ানো বাদ দিয়ে সফর সংক্ষিপ্ত করে ফিরে যান। সিলেটের মণিপুরী কাপড় ও কারুপণ্যের সবচেয়ে বড় মার্কেট লামাবাজারেও ছিল পর্যটকদের ভিড়। পর্যটনকেন্দ্র থেকে ঘুরে এসে সন্ধ্যায় পর্যটকরা ভিড় করেন লামাবাজারের মণিপুরী কাপড় ও কারুপণ্যের দোকানে। এছাড়া চা পাতা নেওয়ার জন্য হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার সংলগ্ন দোকানগুলোতেও পর্যটকদের ভিড় করতে দেখা যায়। সবমিলিয়ে এবার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা খাতগুলো ছিল বেশ চাঙা।

সর্বশেষ খবর