সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

লাইফ সাপোর্টে শেরেবাংলার সিসিইউ!

রাহাত খান, বরিশাল

লাইফ সাপোর্টে শেরেবাংলার সিসিইউ!

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) সিসিইউ বা করোনারি কেয়ার ইউনিট এখন লাইফ সাপোর্টে! যেখানে গুরুতর হৃদরোগীর চিকিৎসা হয় সেই ওয়ার্ডটির জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। বাইরের আলো-বাতাস এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য চারদিকে বদ্ধ এই ওয়ার্ডের বেশির ভাগ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বিকল। তীব্র গরমে ওই ওয়ার্ডে হাঁসফাঁস অবস্থা। এদিকে ওই ওয়ার্ডের এনজিওগ্রাম মেশিন, ইটিটি মেশিন এবং ইকো মেশিনটিও দীর্ঘদিন ধরে অচল। এ কারণে সিসিইউ ওয়ার্ডে পরিপূর্ণ সেবা পাচ্ছেন না জটিল হৃদরোগীরা। অপরদিকে ওয়ার্ডের টয়লেট বাথরুমের অবস্থা আরও খারাপ। এদিকে সিসিইউ ওয়ার্ডের সেবিকাদের বিরুদ্ধে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে দুর্র্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। যান্ত্রিক সমস্যার সমাধান হলে আরও কার্যকর সেবা প্রদান করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। এসব সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের হৃদরোগীদের আধুনিক চিকিৎসা সেবার ভরসাস্থল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ বিভাগ। কিন্তু নানা সমস্যায় জর্জরিত এই ওয়ার্ডটি। গতকাল সরেজমিন ওই ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের চরম দুর্ভোগ দেখা গেছে। চিকিৎসাধীন হৃদরোগীদের বাইরের আলো-বাতাস এবং শব্দ থেকে দূরে রাখতে চারদিকে বন্ধ করে নির্মাণ করা হয় সিসিইউ ওয়ার্ড। এ কারণে ওয়ার্ডের ভিতরে সার্বক্ষণিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র প্রয়োজন। কিন্তু ওই ওয়ার্ডের বেশিরভাগ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বিকল। যেগুলো সচল আছে সেগুলোও কার্যকর নয়। এ কারণে তীব্র গরমে বদ্ধ ওই ওয়ার্ডটিতে হাঁসফাঁস অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। গরম থেকে বাঁচতে যে যার মতো করে বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহার করে সাময়িক উপশম খোঁজার চেষ্টা করছেন। হৃদরোগীদের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এনজিওগ্রাম মেশিন ও ইটিটি মেশিন দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে অচল। অপরদিকে দেড় বছর ধরে ইকো মেশিন বিকল। এ কারণে হৃদরোগীদের যথাযথ সেবা দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। রোগী একটু জটিল হলেই তাকে উন্নত চিকিৎসার নামে ঢাকায় প্রেরণ করে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনরা জানান, সিসিইউ ওয়ার্ডে মানবিক বিপর্যয় হয়েছে। সিসিইউ ওয়ার্ডে পিনপতন নীরবতা থাকার কথা থাকলেও সেখানকার পরিবেশ অনেকটা হাট-বাজারের মতো। শীতাতপ মেশিন বিকল থাকায় তীব্র গরমে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হৃদরোগীর পরিচর্যাকারী স্বজনদের প্রাণও গরমে যায় যায় অবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন লিলি বেগম নামে এক স্বজন।  রোগীর স্বজন নিজামুল হক জানান, সিসিইউ ওয়ার্ডে তেমন কোনো আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। হৃদরোগীর চিকিৎসায় অত্যাবশ্যকীয় এনজিওগ্রাম, ইটিটি এবং ইকো মেশিনটি বছরের পর বছর ধরে অচল থাকায় রোগীরা এর সুফল থেকে বঞ্চিত। সামান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হলে বাইরের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিকের সাহায্য নিতে হয়। রোগীর অবস্থা একটু জটিল হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ঢাকায়।  ভুক্তভোগী স্বজনরা জানান, ওই ওয়ার্ডের টয়লেট বাথরুমে বেসিন ও টেপ কল ভাঙা। লাইট নেই। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হওয়ায় টয়লেট বাথরুম ব্যবহার অনুপযোগী। সর্বোপরি দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সদের রুক্ষ ব্যবহারে রোগীদের স্বজনরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।  হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক সহযোগী অধ্যাপক ডা. শরাফত নুরুল ইসলাম বলেন, সিসিইউ ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন রোগী ভর্তি হয়। দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী চিকিৎসাধীন থাকে। ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ মেশিনগুলো দীর্ঘদিন ধরে সার্ভিসিং না করায় অকার্যকর হয়ে গেছে। এগুলো নতুন করে স্থাপন করা গেলে রোগীদের আরও আন্তরিকভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।  এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, সিসিইউ বিভাগের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অচিরেই রোগীরা এর সুফল পাবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর