শিরোনাম
বুধবার, ৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

স্বস্তি আর শঙ্কার ঈদযাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বস্তি আর শঙ্কার ঈদযাত্রা

ঈদের বাকি আর মাত্র তিন দিন। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে গতকালের ছবি -রোহেত রাজীব

ঈদযাত্রা নিয়ে দক্ষিণে স্বস্তি এলেও দুর্ভোগের শঙ্কা রয়ে গেছে উত্তরের পথে। এ স্বস্তি আর শঙ্কা নিয়েই শুরু হয়েছে এবারের ঈদযাত্রা। ঈদুল আজহা উদযাপন করতে ঢাকা ছাড়বে ১ কোটির বেশি মানুষ। ঢাকার বাইরেও বিপুলসংখ্যক মানুষ যাতায়াত করবে বিভিন্ন গন্তব্যে। বিপুল পরিমাণ যাত্রীর চাপ সামাল দিতে প্রস্তুত সরকারি-বেসরকারি পরিবহন, ট্রেন ও লঞ্চ। প্রতি ঈদেই ঘরমুখী মানুষের সবচেয়ে বড় আগ্রহ থাকে ট্রেনে যাতায়াত। গতকালই অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে মানুষ ট্রেনে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, এবার ঈদে ঢাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৭ হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা হবেন। ঘরমুখী মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে স্বাভাবিক বহরের সঙ্গে ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন যুক্ত করেছে রেলওয়ে। আন্তঃনগর সব ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ বাতিল করা হয়েছে। তবে চাহিদার চেয়ে রেলওয়ের যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা কম হওয়ায় অনেকেই ট্রেনের প্রত্যাশিত টিকিট পাননি। এবারের ঈদযাত্রায় বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ট্রেনের সময়সূচি স্বাভাবিক রাখা। এ বিষয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘আমাদের ঈদযাত্রা শুরু হলো। কয়েকটি ট্রেন ছাড়া সবগুলো ট্রেনই গতকাল শিডিউল অনুযায়ী ছেড়েছে। শুধু রংপুর এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, ধুমকেতু এক্সপ্রেস ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস দেরিতে ছেড়েছে। ট্রেন বিলম্বে আসায় ছাড়তে দেরি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছাড়ার সব প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে এ বিপর্যয় আর থাকবে না।’ ঈদযাত্রায় সিংহভাগ মানুষের ভরসা সড়কপথ। ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের সিংহভাগ টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি করে ফেলেছে পরিবহন কোম্পানিগুলো। গত ২৪ জুন বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করে পরিবহন কোম্পানিগুলো। গত ঈদুল ফিতরে অনেক বাসের টিকিট অবিক্রীত থাকলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। ঈদের আগে-পরে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এবার বাসের টিকিটের চাহিদা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন পরিবহনসংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে ঈদ উপলক্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন কোম্পানি বিআরটিসি চালু করেছে বিশেষ সেবা। গত সোমবার শুরু হওয়া এ বিশেষ সেবা চলবে ১২ জুলাই পর্যন্ত। সংস্থাটি জানিয়েছে, যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে ঢাকার বিভিন্ন ডিপো বা টার্মিনালে জরুরি সার্ভিস দেওয়ার লক্ষ্যে ৬০টি বাস স্ট্যান্ডবাই থাকবে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, মিরপুর-১২ নম্বরসহ মিরপুর বাস ডিপো, কল্যাণপুর বাস ডিপোর সামনে, নবীনগর, মতিঝিল বাস ডিপোর সামনে, মহাখালী বাস টার্মিনাল, জোয়ারসাহারা বাস ডিপো, মোহাম্মদপুর বাস ডিপো, গাজীপুর চৌরাস্তা, হেমায়েতপুর বাস স্ট্যান্ড ও চন্দ্রা বাস স্ট্যান্ডে এসব বাসের বিশেষ সেবা পাওয়া যাবে। ঈদে সড়কপথে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সড়ক বিভাগ, সাসেক, বিআরটিএ, পৌরসভা, মালিক ও শ্রমিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্ব পালন করবে। গত শনিবার এক সভায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিনুল্ল্যাহ নূরী এসব কথা বলেন। এবার ঈদযাত্রায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সিংহভাগ মানুষ পদ্মা সেতু ব্যবহার করবে। তবে ঢাকার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথগুলো যানজটপ্রবণ হওয়ায় কিছুটা জনদুর্ভোগ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে যাত্রীরা। পদ্মা সেতু চালু হলেও দক্ষিণাঞ্চলমুখী শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি ঘাট চালু রাখার কথা জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা। ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটেও। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের প্রধান সড়ক টাঙ্গাইল-রংপুর মহাসড়কে উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় দুর্ভোগের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন যাত্রীরা। যানজটে ভোগান্তির শঙ্কায় আছেন সিলেট ও ময়মনসিংহমুখী যাত্রীরাও। রেল ও সড়কপথে টিকিটের জন্য চাপ থাকলেও নৌপথে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় সড়কপথমুখী এবার দক্ষিণের যাত্রীরা, যার প্রভাব পড়েছে নৌপথে। লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, আগে ঈদের সময় কাউন্টারগুলোয় যাত্রীর ভিড় লেগেই থাকত। টিকিট কালোবাজারিও হতো। কিন্তু এবার যাত্রীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কম। লঞ্চের ফ্যামিলি কেবিনের কিছু চাহিদা থাকলেও সিঙ্গেল কেবিনের বেশির ভাগ টিকিট এখনো অবিক্রীত রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর