শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

হালদার সংযোগ খাল থেকে আট দিনে উদ্ধার মৃত তিন ডলফিন

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর রাউজান পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ গহিরার হালদার সংযোগ খাল বুড়িসর্তা থেকে ১৪ জুলাই প্রায় সাড়ে ৮ ফুট দৈর্ঘ্যরে ১২০ কেজি ওজনের একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বুধবার দুপুরে হালদার আজিমের ঘাট এলাকায় দাঁতসহ মুখের একাংশ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই গতকাল সকালে রাউজানের পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকায় আকেকটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে মাত্র আট দিনের ব্যবধানে তিনটি ডলফিন উদ্ধার করা হলো। আট দিনে তিনটি ডলফিনের মৃত্যু হয় কখনো জালে আটকে, কখনো ইঞ্জিনচালিত নৌকার আঘাতে। হালদায় নৌপুলিশ সক্রিয় থাকলেও নীরব প্রশাসন ও বন বিভাগ। জানা গেছে, ২০১৯ সালে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ডলফিন রক্ষায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) সদস্যসচিব করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

তবে অভিযোগ উঠেছে, মৃত ডলফিন মাটিচাপা দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজে দেখা যায় না বন বিভাগকে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ল্যাবটি ডলফিনের মৃত্যুর রেকর্ড করছে। ২০১৭ থেকে বুধবার পর্যন্ত হালদা থেকে ৩৮টি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে কোনোটির শরীরে ক্ষতের চিহ্ন, কোনোটি জালের মধ্যে আটকে, কোনোটির দেহে ইঞ্জিনের আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। ২০২০ সালের এক জরিপে হালদায় ১২৭টির মতো ডলফিনের উপস্থিতি মিলেছিল।

চবি হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘মাত্র আট দিনের ব্যবধানে তিনটি মৃত ডলফিন উদ্ধার বড় সতর্কবার্তা ও উদ্বেগের। গতকাল উদ্ধার ডলফিনটির দৈর্ঘ্য ৭ ফুট, ওজন ৬০ কেজি। তবে পচে যাওয়ায় এটির মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে নদীতে প্রচুর জাল বসানো হচ্ছে। ডলফিন কিছুক্ষণ পরপর নিঃশ্বাস নিতে পানির ওপরে ভেসে ওঠে। এ সময় জালে আটকা পড়ে কিছুক্ষণ শ্বাস নিতে না পারলেই ডলফিন মারা যায়। বেশির ভাগ সময় জাল ছাড়াতে ডলফিনকে আঘাত করা হয়। তাতেও ডলফিনগুলো মারা যায়। পরে মৃত ডলফিন নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) গাঙ্গেয় ডলফিনকে ‘বিপন্ন’ হিসেবে লাল তালিকায় রেখেছে। ২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুসারে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। ডলফিনের চোখ নেই। মূলত ইকো সাউন্ড দিয়ে এরা চলাফেরা ও খাবার সন্ধান করে। এদের শরীরের গঠন নরম প্রকৃতির। বিশ্বের বিভিন্ন নদীতে বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন আছে মাত্র ১ হাজার ১০০।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর