শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের খাল

বেদখলে বেহাল দূর হচ্ছে না জলাবদ্ধতা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

হারিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের খাল

চট্টগ্রাম নগরের পানি নিষ্কাশনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম মহেষ খালের যতদূর দৃষ্টি যায়, শুধুই কচুরিপানা। খালের কোনো চিহ্নই দেখা যায় না -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রাম নগরের পানি নিষ্কাশনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম মহেষ খাল। নগরের আগ্রাবাদ-হালিশহরসহ আশপাশের সব এলাকার পানি এ খাল হয়ে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে। কিন্তু এটির বিভিন্ন অংশ এখন আর খাল নেই। দেখে মনে হয় এটি একটি পরিত্যক্ত বিরান ভূমি।      

গতকাল দুপুরে দেখা গেছে, মহেষখালের আগ্রাবাদ বড়পুল এলাকা থেকে উত্তর ও দক্ষিণে যতদূর দৃষ্টি যায়, কেবলই কচুরি পানার জঞ্জাল। খালের কোনো চিহ্নই দেখা যায় না। কোথাও খাল দখল করে তৈরি হয়েছে বহুতল ভবন কিংবা দোকান, কোথাও দখলের চেষ্টা চলছে। দেখে মনে হয় না এটি একটি খাল। কেবল এ মহেষ খাল নয়, নগরের অনেক খালেরই এখন এমন বেহাল অবস্থা। তাছাড়া, পানি নিষ্কাশনের অন্যতম চাক্তাই খালের ডিসি রোড, ধনীর পুল ও দেওয়ান বাজার এলাকার অংশটি দেখে মনে হবে না এটি একটি খাল। নগরের খালগুলো দেখভাল করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। অতীতে নগরের জলাবদ্ধতার কারণ অনুসন্ধানে অনেক কমিটি গঠিত হয়েছিল। সর্বশেষ গত ২২ জুন চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রতিবেদনেও আগ্রাবাদ-হালিশহর এলাকার পানি দ্রুত নিষ্কাশনে খালের উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়।   

জানা গেছে, নগরে মোট ৫৭টি খাল আছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের অধীনে নগরের ৩৬টি খাল সংস্কার-উন্নয়ন করছে। কিন্তু বাকি ২১টি খাল এখন দখল ভরাটে বেহাল, বিপর্যস্ত। ইতোমধ্যে চসিক ২১টি খালের উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারে ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগের কথা বললেও এ নিয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। ফলে খালগুলো এখন অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে আছে।

অভিযোগ আছে, নগরের খালগুলো চসিকের নিয়মিত পরিষ্কার করার কথা। কিন্তু এখন মেগা প্রকল্পের অধীন ৩৬টি সংস্কার করা হলেও বাইরের খালগুলো অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে আছে। ফলে এ বছর বর্ষার আগে তিন দফা এবং বর্ষার শুরুতেই টানা তিন-চারদিন পানির নিচে তলিয়ে যায় নগর। খাল নিয়মিত পরিষ্কার না করায় জলাবদ্ধতা প্রকট হচ্ছে। অতীতে পানি নিষ্কাশন হতো এমন ৩০ ফুট প্রস্থের খাল এখন ৮-১০ ফুট। সরু হতে হতে এখন চলাচল করে না পানি। অনেক স্থানের খাল এখন পরিণত হয়েছে নালায়। তদুপরি খাল দখল করে স্থাপনা করেছে স্বয়ং চসিক।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, মেগা প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খালের উন্নয়ন-সম্প্রসারণ কাজ চলছে। নগরের বাকি ২১টি খাল সংস্কার নিয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা আছে। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় আপাতত এসব খাল নিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। তবে নগরের পানি নিষ্কাশনে চসিক নিয়মিত খালগুলো পরিষ্কানের কাজ অব্যাহত রেখেছে। ২১ খালের বিষয়ে আগামীতে পরিকল্পিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।     

জানা গেছে, অতীতে চট্টগ্রাম নগরে খাল ছিল ৭১টি। চসিকের তালিকায় নগরে খাল আছে ৫৭টি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের অধীনে সংস্কার-উন্নয়ন করছে ৩৬টি। চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পে নগরের খাল ৩৬টি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে খাল আছে ৫৬টি। অন্যদিকে, চসিকের ৫৭ খালের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত খাল ১৩টি, কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ৩৩টি ও হালদা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খাল ১০টি। তবে অতীতে চট্টগ্রাম নগরে ছোট-বড় মিলে ১৮২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ১১৮টি খাল থাকার রেকর্ড রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত অর্ধশত খাল অস্তিত্বহীন। চট্টগ্রাম নগর থেকে পানি সরাসরি প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে মূলত ১০টি খাল দিয়ে। এগুলো হলো চাক্তাই খাল, রাজা খাল, বিবি মরিয়ম খাল, কলাবাগিচা খাল, ফিরিঙ্গি বাজার খাল, বাকলিয়া খাল, মহেশ খাল, বোট ক্লাব খাল ও ডোমখালী খাল দিয়ে। কিন্তু এসব খালের অধিকাংশ স্থান দখল-ভরাটের কবলে। মেগা প্রকল্পের অধীনে খাল উদ্ধার ও সংস্কার কাজ এখন চলমান। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেগা প্রকল্পের বাইরে থাকা ২১ খালের মধ্যে অনেকগুলো এখন ভরাট, বেদখল ও খাল দখল করে স্থাপনা তৈরি হয়ে গেছে। অনেকগুলোর অবস্থা শোচনীয়, অনেকগুলোর অবস্থা দৈন্যদশা, অনেক খাল এখন অস্তিত্বহীন। চাক্তাই খালের দেওয়ান বাজার ও ডিসি রোড অংশ দেখে মনে হয় খালের মধ্যেই বর্জ্যরে ভাগাড়। বহদ্দারহাট কাঁচা বাজারের পাশের খালটি দখল করে চসিক বহুতল ভবন করেছে। কালারপুল এলাকার খালটিরও বিভিন্ন অংশ বেদখলে। অভিন্ন চিত্র রাজা খালের বিাভন্ন অংশের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর