বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বরিশালে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল সার

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল সার

বরিশালে তৃণমূল পর্যায়ে বিক্রীত সারে ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে। এ অঞ্চলে বিক্রীত ১১ ধরনের সারে ভেজালের প্রমাণ পেয়েছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ভেজাল সার প্রয়োগে কৃষি ফসল এবং মাটির স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত দুই বছর ধরে বিক্রীত সারে অতিরিক্ত মাত্রায় ভেজাল পাওয়া গেলেও অভিযুক্ত ডিলার বা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না দাবি বরিশাল জেলা প্রশাসকের। বরিশাল বিভাগীয় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মামুন বলেন, বাজারে বিক্রীত জিংক সালফেট মনো, জিংক সালফেট হেপ্টা ও মিশ্র সারের নমুনা পরীক্ষায় ৮৭ ভাগ থেকে শতভাগ ভেজাল রয়েছে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী আমিনুল ইসলাম জানান, আগের চেয়ে সারে ভেজালের পরিমাণ বেড়েছে। গত দুই বছরে প্রাপ্ত ৬৬৩টি সারের নমুনা পরীক্ষায় ১৩৭টির মধ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে। বাজারে বিক্রীত সারের ২১ ভাগ ভেজাল। বিভাগীয় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ কে এম আমিনুল ইসলাম আকন জানান, বরিশাল অঞ্চলে কৃষকের মাঠে ব্যবহৃত ১১ পদের সারের মধ্যে টিএসপি, ডিএপি, জিংক, বোরিক অ্যাসিড, সলুবর, জিপসাম, মিশ্র ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট জাতীয় সারে ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে। এসব ভেজাল সার ব্যবহারে কৃষি ফসল ফলন ও মাটির স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সারে ভেজাল পাওয়ার পরও আজ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কোম্পানি, ডিলার কিংবা খুচরা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি কোনো সংস্থা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক হৃদয়েশ্বর দত্ত্ব বলেন, বরিশাল বিভাগে ৩৬২ জন সার ডিলার ও ২ হাজার ৫০৫ জন খুচরা সার বিক্রেতা রয়েছেন। কোথাও সারে ভেজাল পাওয়া গেলে ওইসব সার জব্ধ করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বাজার থেকে তাদের সার প্রত্যাহার করতে বলা হয়। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষণা রিপোর্ট সম্পর্কে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ অবগত নয় বলে তিনি জানান। এদিকে ভোক্তা পর্যায়ে ভেজাল সার বিক্রির বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বরিশাল জেলা প্রশাসনের কাছে।

 এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, বরিশালের বাজারে ভেজাল সার বিক্রির কোনো তথ্য আজ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কোনো দফতর জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেনি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, ৮ লাখ ১৭ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমিতে প্রয়োগের জন্য প্রতি বছর ৩ লাখ ৬৮ হাজার ২০৪ মেট্রিক টন সার ব্যবহার হয়ে থাকে। সে হিসাবে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন ভেজাল সার বিক্রি হচ্ছে বরিশাল অঞ্চলে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর