বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পুরো নয়, ইজারা দেওয়া হবে ১ কিলোমিটারই

চট্টগ্রামের দৃষ্টিনন্দন ও নয়নাভিরাম পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের দৃষ্টিনন্দন ও নয়নাভিরাম সমুদ্রসৈকত পতেঙ্গা নিয়েই চলছে নানান আলোচনা-গুঞ্জনও। এই পতেঙ্গাসৈকত দেখতে প্রতিদিনই যাচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন এই পতেঙ্গাসৈকত চট্টগ্রামের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে প্রায় ৭ কিলোমিটারের নয়নাভিরাম এই পতেঙ্গাসৈকত এলাকাটি শুধু ১ কিলোমিটারই ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। বাকি জায়গাটি উন্মুক্তই থাকছে বলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই পতেঙ্গাসৈকত নিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সুশীল মানুষরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছিল ইজারা না দেওয়ার জন্য। এই স্থানীয় ও চট্টগ্রামবাসীর সৌন্দর্যের প্রতীক এই পতেঙ্গাসৈকতটি উন্মুক্ত রাখতে আন্দোলনে নেমেছে চট্টগ্রামবাসী। সৈকতের একাংশের ব্যবস্থাপনা বেসরকারি অপারেটরকে দেওয়ার পরিকল্পনা সিডিএ বাতিল না করলে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের নেতারা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের সুন্দর্য রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রায় ৭ কিলোমিটারের ওপরে দৃষ্টিনন্দন এই সৈকতের ১ কিলোমিটার ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। এতে মন্ত্রণালয়েরও অনুমতি রয়েছে। কারণ রক্ষণাবেক্ষণ না হলে কীভাবে সম্ভব পুরো এলাকাটি সুন্দর করে গড়ে তোলা। তবে ইজারা কত বছরের হবে সেটি এখনো ঠিক হয়নি।

তাছাড়া সবকিছু বিবেচনা করেই আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তবে এ বিষয়ে জানতে পতেঙ্গাসৈকতের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস অফিসে যেতে বলেন তিনি। পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়–য়া বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন ৭ কিলোমিটার পরিসরের দেড় কিলোমিটার পরিসরকে পর্যটন জোন-১ এবং পর্যটন জোন-২ হিসেবে ভাগ করে টেন্ডারের মাধ্যমে ২৫ বছরের জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইজারা দিতে পরিকল্পনা করেছিল। বিশ্বের কোথাও ব্যক্তি খাতে বিস্তৃত সৈকত বা নদী তীরে প্রবেশ মূল্যের বিনিময়ে প্রবেশের অধিকার হরণ করা হয়েছে এমন তথ্য আমাদের জানা নেই। তিনি বলেন, একটি সর্বজনীন উন্মুক্ত পরিসর ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য উন্মুক্ত রেখেও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব। পর্যটকদের জন্য জলযান ভ্রমণ, ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, নানা রকম দোকান, খেলার ব্যবস্থা ইত্যাদি নির্মাণ করে সিডিএর নিয়ন্ত্রণাধীন রেখে এসব পরিচালনা সুযোগ ব্যক্তিগত খাতে ইজারা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তবে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য সরাসরি সিডিএ এবং মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছি। দেখি কী করে। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

জানা গেছে, ২৫ বছরের জন্য চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত বেসরকারি খাতে ইজারা দিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এই ইজারায় পর্যটকদের জন্য প্রবেশ ফি নির্ধারণ করেও সবার বিরোধিতায় এ শর্ত বাদ দিয়েছে সংস্থাটি। অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্যমন্ডিত উন্মুক্ত সাগরপাড় ইজারার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে চট্টগ্রামের মানুষ। এটাকে ঘিরে ব্যাপক ইজারা না দিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখতে আন্দোলনসহ সংবাদ সম্মেলনও করেছিল সুশীল সমাজ।

সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, সৈকতের পতেঙ্গা অংশ থেকে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার অংশ নিয়ে হবে ‘পর্যটন জোন-১’। এর মধ্যে ৭০০ মিটার অংশ থাকবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। টেন্ডারের মাধ্যমে সেখানে অপারেটর নিয়োগ করা হবে। বাকি সোয়া ৫ কিলোমিটার সৈকত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে এর রক্ষণাবেক্ষণ করবে একই বেসরকারি অপারেটর প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া আকমল আলী রোড সংলগ্ন সৈকতের যে অংশটি সাগর থেকে ল্যান্ড রিক্লেইমের (জমি পুনরুদ্ধার) প্রক্রিয়ায় পাওয়া গেছে, সেখানকার ২৩ একর জমি নিয়ে হবে ‘পর্যটন জোন-২’। জোন-২-তে পর্যটকদের জন্য হোটেল-মোটেল-রাইডসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলার সুযোগ রাখা হয়েছে পরিকল্পনায়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর