মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভিন্ন কৌশলে আওয়ামী লীগ-বিএনপি

বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ শীতল বিএনপি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নেয়নি বিএনপি। আওয়ামী লীগের জন্য অনেকটা ফাঁকা মাঠ। তারপরও বিদ্রোহীদের ছাড় দিতে চায় না দলটি। স্থানীয় সরকারের অধীনে উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের বহিষ্কার শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। রবিবার রাতে ছয়জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিদ্রোহীদের পক্ষে কোনো নেতা-কর্মী প্রচারণায় নামলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের মধ্যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য স্থাপনে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোর সিলেট আওয়ামী লীগ। তবে এ ক্ষেত্রে কৌশলী ভূমিকায় রয়েছে বিএনপি। বর্তমান সরকারের অধীনে সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের নেতারা অংশ নিচ্ছেন। দলের পক্ষ থেকেও বিষয়টি ‘দেখেও না দেখার ভান’ করা হচ্ছে। সিলেটে একটি উপজেলা পরিষদ, একটি পৌরসভা ও ৪টি ইউনিয়ন পরিষদে প্রার্থী হওয়া ১৫ নেতার বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি দলটি। আগামী ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভা, ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ এবং গোয়াইনঘাটের চারটি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছয়জন বিদ্রোহী ও দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে বিএনপির ১৫ জন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে গত রবিবার রাতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে গোয়াইনঘাটের ৬ বিদ্রোহী ইউপি চেয়ারমান প্রার্থীকে বহিষ্কারের খবর জানায় জেলা আওয়ামী লীগ। বহিষ্কৃতরা হলেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য লুৎফুর রহমান লেবু, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রব্বানী সুমন, গোয়াইনঘাট সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমদ, মধ্য জাফলং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা লোকমান শিকদার, পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শামীম আল মামুন ও পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মামুন পারভেজ। তবে বিএনপি দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের ব্যাপারে অনেকটাই শীতল মনোভাব পোষণ করা হচ্ছে। দলীয় পদবিধারী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে রাখা হয়েছে।

তবে নির্বাচনের আগে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র পদে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের বহিষ্কার করা হতে পারে। নির্বাচনের পর তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে- এমন কৌশল অবলম্বন করা হবে বলে দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

এদিকে সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ। দলীয় মনোনয়ন না চাইলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা মুহিবুর রহমান। এই উপজেলায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জালাল উদ্দিন, যুক্তরাজ্যের নিউহ্যাম বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মুমিন খান মুন্না ও ওল্ডহ্যামের সভাপতি মো. জালাল উদ্দিন।

ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ। বিএনপি নেতাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গয়াছ মিয়া, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জুয়েল মিয়া ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা মুছলিমা আক্তার চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন। গোয়াইনঘাট উপজেলার চার ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির ৬ নেতা।

বিদ্রোহীদের প্রসঙ্গে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো স্থান নেই আওয়ামী লীগে। শেখ হাসিনা যাদের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ করতে হলে তাদের পক্ষে কাজ করতে হবে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের ইতোমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের পক্ষে কেউ কাজ করলে একই ভাগ্যবরণ করবেন।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর