দেশে ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েরা ধর্ষণের শিকার বেশি হওয়ার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সংগঠনটির জরিপ বলছে- পথে, বাসে, ট্রেনে, ঘরে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারীরা। সহিংসতার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনাই বেশি। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে তরুণের সংখ্যা বেশি। নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি ২ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা। ২০২১ সালে নারী ও শিশুর ৫ ধরনের নির্যাতনের মধ্যে ধর্ষণ ৮১০টি, দলবদ্ধ ধর্ষণ ২২৫টি, ধর্ষণচেষ্টা ১৯২টি, যৌতুক ১১৪টি এবং উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানির ৯৬টি ঘটনা ঘটেছে। ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের ৩১ শতাংশ দলবদ্ধ ধর্ষণ, ১৮ শতাংশ ধর্ষণ ও ১১ শতাংশ ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে। উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা বেশি, এ হার ২২ শতাংশ। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মহিলা পরিষদের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন চিত্র ২০২১: ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, যৌন হয়রানি ও যৌতুক’ শিরোনামে সমীক্ষা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। ১৪টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ২০২১ সালে প্রকাশিত নারী ও শিশুর ৫ ধরনের নির্যাতনের খবর বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে মহিলা পরিষদ। সমীক্ষা পরিচালনা করেন মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও সম্পাদক রীনা আহমেদ। প্রতিবেদন তৈরি ও তা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন সংস্থার গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও মাসুদা রেহানা বেগম। প্রতিবেদনে নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে আইনের প্রয়োগ, জেন্ডার সংবেদনশীলতা তৈরি, তরুণদের মধ্যে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাড়ানোসহ বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন-নির্যাতনের প্রকৃত ঘটনা আরও বেশি। পত্রিকায় নির্যাতনের সব ঘটনা উঠে আসে না। নির্যাতনের সব ঘটনা থানাপুলিশ পর্যন্ত গড়ায় না। নির্যাতনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীরা কম বয়সী, আবার অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও কম বয়সী। এত সংখ্যক তরুণ নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত, এটা বিপদের বার্তা বহন করে। নারী নির্যাতন রোধে সরকারি উদ্যোগ থাকলেও তা যথাযথ নয়, যতটুকু আছে, ততটুকুও বাস্তবায়িত হয় না। ফওজিয়া মোসলেম বলেন, শক্তিশালী নারী আন্দোলন, নারীবান্ধব রাষ্ট্রীয় নীতি গড়ে উঠতে হবে। নারীকে সমাজে, পরিবারে যোগ্য মূল্যায়ন না করলে নির্যাতন প্রতিরোধ করা সহজ হবে না।
মহিলা পরিষদের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়- সামাজিক বন্ধন বা পরিচিত লোকজন নারীকে যতটুকু নিরাপত্তা দিচ্ছে, তার চেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীন করে তুলছে। যৌতুকের ক্ষেত্রে ৭৬ শতাংশ নারী স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৩০ শতাংশ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত প্রতিবেশী।
তবে উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও বখাটেদের দ্বারা নির্যাতনের ঘটনা বেশি, এ হার ৫০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌতুকের ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী নারীরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এ হার ২২ শতাংশ। ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার মেয়েদের মধ্যে ছাত্রী বেশি। ৫২ শতাংশ ছাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণ, ৪৫ শতাংশ ধর্ষণ এবং ৬৭ শতাংশ উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানির শিকার। কর্মজীবী নারীদের তুলনায় গৃহবধূরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের তুলনায় বেশি হারে যুব ও তরুণ নির্যাতনকারী হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন। ধর্ষণের ক্ষেত্রে ১১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২৬ শতাংশ পুরুষ অভিযুক্ত। নারী নির্যাতনের মামলাগুলো বিচারে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। কঠোর শাস্তির দৃষ্টান্ত নেই বলে পার পেয়ে যান ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। বিলম্বিত বিচারপ্রক্রিয়া সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।