তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন- বিএনপি সমাবেশের নামে পিকনিক করছে। সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির সমাবেশগুলো আসলে বড় পিকনিক। সিলেটের সমাবেশে তারা তিন দিন আগে গেছে। হোটেলে খাওয়া দাওয়া, তাস খেলা আবার মাঠের মধ্যে তাঁবু টাঙিয়ে রান্নাবান্না করে খেয়েছে। এগুলোর জন্য সারা দেশে চাঁদাবাজি করছে। অনেক ব্যবসায়ী আমাদের অভিযোগ দিয়েছেন- বিএনপি ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে বা করার চেষ্টা করছে। সাংবাদিকতার নামে কারও রাজনীতি করা উচিত নয় উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, শনিবার সিলেটে বিএনপির এবং গাজীপুরে আওয়ামী লীগেরও সমাবেশ হয়েছে। উপস্থিতির বিচারে দুটি সমাবেশেই সমপরিমাণ লোক সমাগম হয়েছে। গাজীপুরের সমাবেশে কারও কারও মতে বিএনপির সিলেটের সমাবেশের চেয়ে বেশি মানুষ হয়েছে।
যদিওবা সেটি কোনো বিভাগীয় বা জেলা সমাবেশ নয়। সেটি ছিল জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। কোনো কোনো কাগজে, অনলাইনে দেখলাম- গাজীপুরের সমাবেশের ছবিটা দিয়েছে মঞ্চের এবং দর্শকের একটা অংশ মাত্র। বিএনপির সমাবেশের ছবিটা দূর থেকে নিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে মনে হয় অনেক লোক হয়েছে। অবশ্যই বিএনপির সমাবেশ হবে, সেটি পত্রপত্রিকায় প্রচার পাবে। কিন্তু এ ধরনের উপস্থাপনা সমীচীন কি না আপনাদের কাছে প্রশ্ন।
এ ক্ষেত্রে বিএনপির প্রভাব বা অর্থায়ন আছে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের কোনো ইনভেস্টমেন্ট আছে কি না, কিংবা বিরোধী দল যে জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিরোধী দলের হয়ে সেই জঙ্গিদের কোনো অর্থায়ন আছে কি না সেটি একটি বড় প্রশ্ন। তবে আমি আশা করব, শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের এ ধরনের অপসাংবাদিকতা করা উচিত নয় বা সাংবাদিকতার নামে রাজনীতি করা সমীচীন নয়। অনেক সময় দেখা যায় সাংবাদিকরা হাউসে যে রিপোর্ট, যে ছবি দিয়েছেন সেটি এডিটিং প্যানেলে গিয়ে পরিবর্তন হয়ে যায়। এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
১০ ডিসেম্বর নয়া পল্টনে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়া হলে বিএনপি সারা ঢাকা শহরে সমাবেশ করবে- এ মন্তব্যের জবাবে সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি যে ধরনের গণসমাবেশ করতে চায় সে জন্য উপযুক্ত জায়গা হচ্ছে পূর্বাচল। মিরপুর ও বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়েও জায়গা আছে, সেগুলোও অনেকে বলছেন। বিএনপি যে সভা-সমাবেশ করছে, সরকার তাদের সর্বতোভাবে সহায়তা করছে। গত শনিবার সিলেট শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ ছিল। যাতে তারা নির্বিঘ্নে সভা-সমাবেশ করতে পারে। আর আমরা যখন সভা সমাবেশ করতাম, তখন পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিপেটা করত, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করত আর বিএনপি আমাদের সমাবেশে বোমা ছুড়ত। এটিই হচ্ছে তাদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য।
বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা কোনো সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না নিয়ন্ত্রণ করি না করাও হবে না। কিন্তু সমাবেশের নামে যদি কেউ বিশৃঙ্খলা করে তাহলে সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। আমরা অতীতেও দেখেছি বিএনপি সমাবেশের নামে নানা জায়গায় বিশৃঙ্খলা করেছে। বাস ট্রাক পুড়িয়েছে। মানুষ পুড়িয়েছে। ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল। বিজয়ের মাসে ১০ ডিসেম্বর যদি পাকিস্তানপন্থি বিএনপির লোকজন, মির্জা ফখরুলরা ঢাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালায়, জনগণ তাদের পাকিস্তানিদের মতোই আত্মসমর্পণ করাবে।’ ‘বিএনপি যতই তারেক রহমানের কথা বলে ততই জনগণ থেকে দূরে সরে যায়।’
বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য ‘বিএনপি তারেক রহমানকে ফিরিয়ে এনে দ্বিতীয়বারের মতো দেশ স্বাধীন করবে’ এর জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘তারেক রহমানের কথা বললেই মানুষ আঁতকে ওঠে। এদেশের মানুষের কাছে তারেক রহমান হচ্ছে দুর্নীতির প্রতীক, সন্ত্রাসের প্রতীক, নৈরাজ্যের প্রতীক। তারেক রহমান দেশকে পরপর দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন করার প্রতীক, হাওয়া ভবনের লুটপাটের প্রতীক এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার শাস্তিপ্রাপ্ত আসামি। তারেক রহমানের নেতৃত্বে উনারা দেশে আন্দোলন করবেন অর্থাৎ তারা আবার জ্বালাও-পোড়াও শুরু করবে, আবার মানুষ পোড়াবে। জনগণ এগুলো হতে দেবে না। তারা যতই তারেক রহমানের কথা বলে ততই তারা জনগণ থেকে দূরে সরে যায়।’
বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ, ‘সরকার গায়েবি মামলা করছে’ এর পরিপ্রেক্ষিতে ড. হাছান বলেন, ‘সরকার কোনো গায়েবি মামলা করছে না। বরং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব গায়েবি কথাবার্তা বলছেন। আগের মামলায় যারা জামিনে আছেন তাদের কিছুই করা হচ্ছে না, যাদের জামিন বাতিল হয়েছে তাদের তো পুলিশ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ধরবে।’
