মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

হালদা নিয়ে হচ্ছেটা কী

পাঁচ বছরে ৪০ মৃত ও আঘাতপ্রাপ্ত ডলফিন উদ্ধার, একের পর এক শিকার হচ্ছে মাছ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম  

হালদা নিয়ে হচ্ছেটা কী

উপমহাদেশের অন্যতম মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে বিষপ্রয়োগ করে মাছ শিকারের দায়ে স্থানীয় মো. আলমগীরকে এক মাসের বিনাশ্রম দন্ড দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে হালদা নদীর গড়দুয়ারা ইউনিয়নের গচ্ছাখালী খালের পশ্চিম পাশে বিষপ্রয়োগ করে মাছ শিকারের সময় তাকে আটক করা হয়।       

অন্যদিকে, গত প্রায় পাঁচ বছরে এ নদী থেকে ৪০টি মৃত ও আঘাতপ্রাপ্ত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। তাছাড়া গত জুলাই-আগস্ট মাসে হালদা নদী থেকে সাতটি মৃত মা কাতল মাছ উদ্ধার করা হয়েছে। গত ১০ আগস্ট হালদা নদীর রাউজান অংশের সোনাইমুখ স্লুইস গেট এলাকার শাখা খাল থেকে প্রায় ১১ কেজি ওজনের একটি কাতল মাছ উদ্ধার করা হয়।    

এভাবে একের পর এক শিকার করা হচ্ছে মাছ। নিধন করা হচ্ছে প্রাকৃতিক ডলফিন। চলছে মাছ নিধনের ষড়যন্ত্র। ফলে মাছশূন্য হওয়ার উপক্রম হবে  প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদের আধার খ্যাত দেশের একমাত্র নদী হালদার।  

হালদার স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, হালদা নদী থেকে যে হারে মৃত কাতল মাছ এবং ডলফিন উদ্ধার করা হচ্ছে, তাতে আগামীতে নদীটির জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এভাবে মা মাছ নিধন করা হলে নদীর মৎস্য সম্পদে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, কড়া পাহারার কারণে অসাধু জেলেরা জাল ফেলে মাছ ধরতে পারছে না। ফলে নদীতে বিষ ফেলে মাছ ধরার চক্রান্ত শুরু করেছে। এটি হালদার জলজ প্রাণীর জন্য মারাত্মক হুমকি। এ ষড়যন্ত্র ঠেকাতে স্থানীয়দের জোরালো ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। কারণ তারাই হালদার আশপাশে বসবাস করেন। একই সঙ্গে প্রয়োগকৃত বিষ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্যথায় কেবল হালদা নদী নয়, দেশের পুরো মৎস্যসম্পদের জন্য এটি হুমকি হবে। 

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিদুল আলম বলেন, বিষপ্রয়োগ করে মাছ শিকারের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এটি যে কোনোভাবেই রোধ করতে হবে। অন্যথায় হালদার মাছ রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বিষয়টা নিয়ে আমরা একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করব। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।   

জানা যায়, প্রতিনিয়তই হালদা নদী থেকে মৃত মাছ উদ্ধার করা হচ্ছে। এসব মাছের বিভিন্ন উপসর্গে দেখা যায় বিষপান করে মাছটি মারা গেছে। গত ২৬ জুলাই নদীটির রাউজান ও হাটহাজারীর তিন স্থান থেকে তিনটি মৃত মা কাতল মাছ উদ্ধার করা হয়। গত ২৫ জুলাই নদীর রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের কাগতিয়া স্লুইসগেট এলাকা থেকে ৯ কেজি ১০০ গ্রাম ওজনের একটি মৃত মা কাতাল মাছ উদ্ধার করা হয়। গত ৪ জুন রাউজানের উরকিরচর বাকর আলী চৌধুরীঘাট এলাকা থেকে একটি মৃত মা কাতল মাছ উদ্ধার করা হয়। গত ১ জুন হাটহাজারী উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের বাড়িঘোনাঘাট এলাকা থেকে একটি মৃত মা কাতল মাছ উদ্ধার হয়। সেটি ময়নাতদন্তের জন্য চবি হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছিল। এভাবে মা মাছ নিধন ও মারা যাওয়ার ঘটনা চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি করছে বলে জানা যায়।  

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর