শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
গোলটেবিলে বিশিষ্টজনদের ভাষ্য

ঢাকা শহর বাঁচাতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘ঢাকা শহরকে বাঁচাতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। শহরের সঙ্গে সংযুক্ত আশপাশের জেলাগুলোর উন্নয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরগুলোকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। জেলা-উপজেলাকে নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। যত্রতত্র উন্নয়ন বন্ধ করতে হবে। ঢাকা কেন্দ্রিক ক্ষমতাকে কুক্ষিগত না রেখে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। যেসব সংস্থা ঢাকা কেন্দ্রিক থাকার দরকার নেই সেগুলো ঢাকার বাইরে গড়ে তুলতে হবে।’

গত মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ  ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর নগর ভাবনা ও বাংলাদেশ ২০৪১ : স্বপ্ন, সম্ভাবনা ও বাস্তবায়নের পথনকশা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ, ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, লক্ষ্মীপুর ৪ আসনের সংসদ সদস্য মান্নান, সিলেট ৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান, গাইবান্ধা ১ আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, শরীয়তপুর ৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, মহিলা আসন-১১ সংসদ সদস্য আরমা দত্ত ও ৪০ আসনের খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন, নগর গবেষণা কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক গোলাম মর্তুজা ও বুয়েটের অধ্যাপক ইসরাত ইসলাম, বুয়েটের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইশরাত ইসলাম, নগর গবেষণা কেন্দ্রের ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক গোলাম মর্তুজা প্রমুখ।

মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, শুধু ঢাকাতেই পাঁচটি মৌলিক অধিকার (শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা) পুরোটা পূরণ হয়। ঢাকার বাইরে যখন কোনো পরিকল্পনা করা হয়, তখন হয়তো, ওই মৌলিক অধিকারের একটি বা দুটি পূরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সামগ্রিকভাবে সব পূরণের পরিকল্পনা করা হয় না। এ জন্য মানুষ ঢাকামুখী হয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাজের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা এখন পর্যন্ত যে কাজগুলো করেছে, আমি মনে করি এর মধ্যে একটি কাজই স্মরণীয় হয়ে থাকবে, আর সেটি হচ্ছে, ড্যাপ। এ ছাড়া রাজউককে সমাদৃত করার মতো অন্য কোনো কাজ নেই। এ নিয়ে যতই সমালোচনা হোক, ৫০ বছর পরে এটাই হয়তো ঢাকার একমাত্র কাঠামো বা হাতিয়ার থাকবে, যেটার ওপরে ঢাকার ভবিষ্যৎ ভিত্তি রচনা হতে পারে।’ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘আমরা যদি উন্নত বিশ্বে গিয়ে শপিং করা, বিলাসিতা করা ইত্যাদিতে সময় না কাটিয়ে সেসব দেশের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও কার্যক্রম অনুসরণও করি, তাহলেও তা বড় ধরনের সুফল বয়ে আনবে।’

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ না করে কুক্ষিগত করে রাখার প্রচেষ্টা আমাদের মধ্যে রয়েছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত না রেখে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। জেলা-উপজেলাগুলোকে পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, একটি স্কুল তৈরিতে যদি মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন, সুপারিশ লাগে, ঢাকায় আসতে হয়, সচিবালয়ে যেতে হয়, তাহলে আগে যেখানে ৫ হাজার টাকা দুর্নীতি হতো, ঢাকায় আসার কারণে সেখানে ৫০ হাজার টাকা দুর্নীতি হবে। ঢাকাকে বাঁচানোর জন্য তিনি ঢাকার বাইরের শহরগুলোকে, বিশেষভাবে উপজেলা ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে বলেন। মেট্রোরেলের এক্সেসিবিলিটি প্রসঙ্গ তুলে ধরে ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, পরিকল্পনাহীনতাই যেন আমাদের পরিকল্পনা। এত বড় মেট্রোরেলের প্রকল্প হচ্ছে, কিন্তু মেট্রোরেলের নিচের স্টেশন নিয়ে কোনো পরিকল্পনাই নেই। কদিন পরে সেখানেই তো যানজট সৃষ্টি হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রণয়ন করা হয়েছে। সে ড্যাপ কারা বাস্তবায়ন করবে? ঢাকার খাল, জলাশয় এরই মধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। এগুলো উদ্ধার হওয়া সম্ভব? আমাদের পরিকল্পনা উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ উপজেলা পর্যায়ে যত্রতত্র অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে সঠিক পরিকল্পনা করা গেলে দেশের টেকসই উন্নয়ন হবে।

লক্ষ্মীপুর ৪ আসনের সংসদ সদস্য মান্নান বলেন, শহরের উন্নয়নের কথা বাদ দেন। শহরের উন্নয়ন হয়ে গেছে। এখন উপজেলা ও গ্রাম নিয়ে পরিকল্পনা করেন। কারণ গ্রাম বাঁচলে আমরা বাঁচব। এলাকা নিয়ে ভাবেন, পরিকল্পনা করেন। সিলেট ৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাস্টার প্ল্যান করার জন্য বলেছেন। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে কোনো প্ল্যান নেই। যত্রতত্র উন্নয়ন হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে, যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। পুকুর ভরাট হচ্ছে, ফুটপাথ দখল হচ্ছে। গাইবান্ধা ১ আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি মানুষ বাসস্থান হারাবে। এ ছাড়া ১ ডিগ্রি গ্লোবাল ওয়ার্মিং হলে দেশের ১৭ শতাংশ ভূমি পানির নিচে চলে যাবে। বৈশ্বিক জলবায়ু প্রভাব অনেকাংশে আমাদের ওপর পড়ছে। আর ক্ষয়ক্ষতির শিকার আমরা হচ্ছি। এই ক্ষয়ক্ষতির টাকা আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো দেওয়ার কথা। কিন্তু আমরা কতটুকু নিয়ে আসতে পারছি? শরীয়তপুর ৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, শুধু শহরে নয় গ্রাম পর্যায়ে উন্নয়ন হচ্ছে। সেটাকে নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। কারণ উপজেলা কেন্দ্রিক নগরায়ণ হচ্ছে। সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আর উন্নয়ন কাজের রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। সেই রোডম্যাপ অনুযায়ী এগোতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর