শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কিডনি ডায়ালাইসিস নিয়ে কী হচ্ছে

মাথায় ‘আকাশ ভাঙা’ ফি, প্রতিবাদ করলেই হেনস্তা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

কিডনি ডায়ালাইসিস নিয়ে কী হচ্ছে

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের আজাদী বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. মোস্তাকিম। পেশায় ছাত্র। সাত বছর ধরে তার মা নাসরিন আক্তার কিডনি ডায়ালাইসিস করে আসছেন। টিউশনি করে সংসারের খরচও জোগান। টানাহেঁচড়ার সংসার। ফলে ব্যয়বহুল কিডনি ডায়ালাইসিস চিকিৎসায় হিমশিম খেতে হয়। এমন পরিবারের কাছে ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধি মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতোই। তাই তিনি যোগ দেন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে। কিন্তু সেখানে এসেই গ্রেফতার হয়ে মামলার আসামি হন।

কেবল তিনি নন, এরকম অনেক গরিব-অসহায় খেটে খাওয়া রোগী ফি কমানোর দাবিতে এসে পুলিশের নিগ্রহের শিকার হন। মামলা দেওয়া হয় ৫০-৬০ জন অজ্ঞাতের বিরুদ্ধে। আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন, যৌক্তিক দাবি আদায়ে পুলিশের হামলার শিকার হতে হবে কেন? কিডনি ডায়ালাইসিস করা নিয়ে চমেকে কী হচ্ছে? এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিচ তলায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যান্ডোর পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে ২০১৭ সাল থেকে কিডনি ডায়ালাইসিস করে আসছে। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে থেকে ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধি এবং চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডায়ালাইসিসে ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ায় সংকট তৈরি হয়। রোগীদের ডায়ালাইসিস ফি বেড়ে যায় প্রায় তিন গুণ। এ কারণে গত রবিবার থেকে রোগী ও রোগীর স্বজনরা আন্দোলন করছেন। গত মঙ্গলবার হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করার সময় পুলিশের মারধরের শিকারও হন অনেকে। এ সময় পুলিশ মো. মোস্তাকিম নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করে। গত বুধবার দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। গতকাল আদালত রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর, জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি ও তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। মামলার বিবাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, মোস্তাকিমকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তার রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর, জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ ও তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। দুঃখজনক হলো, মামলার আসামির মা সাত বছর ধরে কিডনি ডায়ালাইসিস করে আসছেন। তিনি বলেন, মামলায় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া এবং পুলিশের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ফুটেজে এমন কিছু দেখা যায়নি। পুলিশের এমন ঘটনা ন্যক্কারজনক। কারণ কিডনি ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ভুক্তভোগীরা আন্দোলন করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

হেনস্তার শিকার : চমেক হাসপাতালের সামনে ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন রোগী ও স্বজনরা। কিন্তু সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় মোস্তাকিম নামের একজনকে। আসামি করা হয় আরও অজ্ঞাত ৬০ জনকে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনকালে এভাবে পুলিশের হেনস্তা এবং গ্রেফতার করাটা সভ্য দুনিয়ায় মানায় না। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হাসপাতালের সামনে সড়কে বসে আন্দোলন করছিলেন রোগী ও স্বজনরা। এ সময় পাঁচলাইশ থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনরতদের সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে ওসি হঠাৎ করে চড়াও হন আন্দোলনকারীদের ওপর। এ সময় একজনকে শার্টের কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে একপাশে নিয়ে যান। পুলিশের মারমুখী আচরণে মানববন্ধনে উপস্থিত লোকজন ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরাও এ সময় পুলিশের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন। কিন্তু এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও সড়ক অবরোধ করার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

বিক্ষোভের মুখে ১০ ডায়ালাইসিস মেশিন : কিডনি রোগী ও স্বজনদের বিক্ষোভের পর চমেক হাসপাতালে নতুন করে ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে মেশিনগুলো চালু হবে। মেশিনগুলো বসানোর জন্য হাসপাতালের কিডনি বিভাগের জায়গায় গতকাল থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। মেশিনগুলোয় অন্তর্বিভাগের পাশাপাশি স্যানডোরে সেবা নেওয়া রোগীদেরও কম মূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হবে। ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করার ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চমেক হাসপাতালে ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন দেওয়া হয়। বর্তমানে এই ওয়ার্ডে চারটি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু রয়েছে। এগুলো দিয়ে অন্তর্বিভাগের রোগীদের সেবা দেওয়া হয়।

হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. নুরুল হুদা বলেন, ‘ডায়ালাইসিস মেশিন চলে এসেছে। এখন বসানোর কাজ চলছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এগুলো চালু হবে। এগুলো বসানোর কাজ শেষ হলে রোগীরা কম মূল্যে সেবা পাবেন। ফলে সংকট অনেকটা কাটবে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর