শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজশাহী নগর পরিকল্পনা কতদূর?

সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ শেষ, কাজের নেই অগ্রগতি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীর উন্নয়নে ৫০ বছরের জন্য মহাপরিকল্পনা তৈরি ও তা বাস্তবায়নে কাজ করতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিল চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পাওয়ার চায়না। তিন বছরে আটটি খাত সামনে রেখে পরিকল্পনা তৈরি এবং ধাপে ধাপে সেগুলো বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। ২০১৯ সালে করা সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু মহাপরিকল্পনার কোনো অগ্রগতি নেই। এখন সিটি করপোরেশন বলছে, কাজ শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই পাওয়ার চায়না সমঝোতা থেকে সরে দাঁড়ায়। ফলে ওই পরিকল্পনাটি আর আলোর মুখ দেখেনি। নতুন করে কোনো পরিকল্পনাও করা হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে তাহলে নগর উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা কতদূর?

২০১৯ সালের ১২ মে রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও পাওয়ার চায়নার মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। সিটি করপোরেশনের পক্ষে মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও পাওয়ার চায়নার পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হান কুন এতে সই করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামীতে এটি প্রায় ৪১০ বর্গকিলোমিটারে সম্প্রসারণ করার কথা ছিল। সোনাইকান্দি থেকে তালাইমারী পর্যন্ত পদ্মা নদীতে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার জায়গা পাওয়া যাবে। সে জায়গায় স্যাটেলাইট টাউন, হোটেল, মোটেল, বিনোদনপার্ক গড়ে তোলা, নদীর ধার এমনভাবে তৈরি হবে, যাতে শহরের প্রায় ৪০ শতাংশ অর্থনৈতিক উৎস সেখান থেকে আসবে, বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল তৈরি করে উন্নয়ন, সিঙ্গাপুরের মতো আধুনিক বিশেষায়িত হাসপাতাল, গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন, স্যুয়ারেজ-ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগরীর উত্তর দিকে ‘সায়েন্স সিটি’ তৈরি করা। এ ছাড়া গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভার তৈরি করা।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর ইসলাম তুষার বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই।’ ওই সময় প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন আশরাফুল হক। তিনি বর্তমানে রাসিকের প্রকৌশল উপদেষ্টা। তিনি এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম বাবু জানান, পাওয়ার চায়না সমঝোতা স্মারক সই করার পর কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু কিছুদিন পর প্রতিষ্ঠানটি নিজেরাই কাজটি বন্ধ করে দেয়। পাওয়ার চায়না কাজ না করলেও সিটি করপোরেশন অভ্যন্তরীণ একটি পরিকল্পনা নিতে কাজ করছে। আধুনিক রাজশাহী গড়তে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলমান আছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, শেখ রাসেল পার্ক ছাড়াও আরও চারটি খেলার মাঠ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নগরীর কোর্ট এলাকায় একটি, বুধপাড়ায় একটি, বিমানপাড়া এলাকায় কবরস্থানসহ খেলার মাঠ করার জন্য জায়গা খুঁজে বের করা হয়েছে। আপাতত মহাপরিকল্পনা বাদ দিয়ে নগরীকে পরিকল্পিতভাবে সাজানোর কাজ হচ্ছে। তবে পরিকল্পনাটি যাতে করা যায়, সেই পরিকল্পনাও আছে। এ ছাড়া পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলার জন্য ২০০৪ সালে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) ২০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে। সেটি বাস্তবায়নের সময় প্রায় শেষ। কিন্তু এ মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী নগরীতে যে পরিমাণ খোলা জায়গা রাখার কথা ছিল, তা রাখা হয়নি। শহরের মাত্র একটি ওয়ার্ডে খোলা জায়গা রাখার কিছুটা উদ্যোগ চোখে পড়েছে।

বাকি ওয়ার্ডগুলোতে খোলা জায়গা নেই। আরডিএর অথরাইজ অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোনো শহরের উন্মুক্ত জায়গা কতটুকু রাখা উচিত, নির্ভর করে শহরের জনসংখ্যার ঘনত্বের ওপরে। আবার উন্মুক্ত জায়গার মধ্যে সড়ক, সংরক্ষিত এলাকা ও জলাশয় আছে। রাজশাহীতে সড়ক সাত থেকে আট ভাগের বেশি হবে না। উন্মুক্ত জায়গা দুই থেকে তিন ভাগের মতো। আর জলাশয় চার থেকে পাঁচ ভাগ। একেক শহরের আদর্শ একেক রকম হয়। যেমন রাজশাহী শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতি একরে ৮৪ জন মানুষ বাস করে। আবার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বাস করে ৪ জন। বর্তমানে জলাশয় যে পরিমাণ আছে, তা সংরক্ষণ ও ব্যবহারের উপযোগী করতে পারলেও রাজশাহী নগরীর জন্য ভালো।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর