মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
সক্রিয় কিশোর গ্যাং ও চাঁদাবাজ

খুলনায় হঠাৎ বেড়েছে সামাজিক অস্থিরতা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনায় হঠাৎ করে সামাজিক অস্থিরতা বেড়েছে। যেমন গত এক সপ্তাহে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় স্কুলছাত্র জখম হওয়া, চাঁদা না দেওয়ায় চিকিৎসকের মাথা ফাটানো, স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করা, প্রধান শিক্ষককে পেটানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে সহনশীলতা, সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে উঠছে না। ধর্ম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের অনুশাসন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। বেপরোয়া হয়ে উঠেছে স্কুলের ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীরা। আধিপত্য বিস্তার করতে ‘কিশোর গ্যাং’ তৈরি করে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে অনেকে। জানা গেছে, গত ২২ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে খালিশপুরে সন্ত্রাসী হামলায় স্কুলছাত্র আশিকুর রহমান (১৫) আহত হয়। বন্ধুর সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তাদের সন্ত্রাসীরা মারধর করলে দুজনেই রক্তাক্ত জখম হয়। এর আগে ২১ জানুয়ারি পাইকগাছা আগরঘাটা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সহকারী মেডিকেল অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুনকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয় চাঁদাবাজরা। এ সময় তার স্ত্রী বাধা দিতে এলে তাকেও লাঞ্ছিত করা হয়। পাইকগাছা থানায় মামলা হলেও এসব ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। সহকারী মেডিকেল অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, স্থানীয় একটি দালাল চক্র তার কাছে প্রায়ই সরকারি অতিরিক্ত ওষুধ দাবি করত। ওষুধ না দেওয়ায় চালাল চক্রের কিছু লোক তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকে তাকে মারধর ও তার স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ছাড়া ১৮ জানুয়ারি পূর্ব মনোমালিন্যের জেরে তেরখাদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে মারপিট করেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক। নিয়মিত স্কুল না করায় ওই সহকারী শিক্ষককে বিভাগীয় মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছিল। এতে জড়িত মনে করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দোষারূপ করতেন সহকারী শিক্ষক। এদিকে ১৯ জানুয়ারি প্রতারণার শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণীকে রূপসা এলাকা থেকে উদ্ধার করে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ ‘উই আর বাংলাদেশ’ (ওয়াব)। জানা গেছে, ওই তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে প্রেমের অভিনয় করেন খুলনার কলেজছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান ইমু।

 কিন্তু একপর্যায়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন ইমু। এ অবস্থায় মেয়েটি খুলনায় এসে ইমুর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এক সময় মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় পথে পথে ঘুরতে থাকেন। পরে ফেসবুকের মাধ্যমে খবর পেয়ে তরুণীর বাবা-মা তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। এ ঘটনায় পুলিশ রহস্যজনক ভূমিকা নেয়। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার থেকে খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানার দুই ওসি পর্যন্ত ঘটনাটি এক প্রকার অস্বীকার করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন। খুলনা সদর থানার ওসি হাসান আল মামুন বলেন, শেষ মুহূর্তে মেয়েটিকে উদ্ধারের কথা শুনেছি, কিন্তু কেউ অভিযোগ না করায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর মেয়েটিকে উদ্ধারের এক দিন পরই তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, সাধারণত পুলিশের তৎপরতা ও মনিটরিংয়ের অভাবে সামাজিক অপরাধ বাড়তে থাকে। অপরাধ করেও শাস্তি না পাওয়ায় অপরাধীরা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে।  

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর