বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

হ্যাকিং নাকি অন্য কিছু!

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা, ৬ নম্বর চকবাজার ও ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ২০০১ সালের  ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৮টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করে। এর মধ্যে ১২টিই ছিল রোহিঙ্গাদের নামে। এরপর গত আট মাস ধরে চসিকের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সার্ভার হ্যাক করে ৫ হাজারের বেশি জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়েছে একটি চক্র। এ ঘটনায় পুলিশ চারজনকে গ্রেফতারও করে। রোহিঙ্গাদের অবস্থান শহর কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগটা বেশি হওয়ায় জালিয়াতি করে জন্মনিবন্ধন নেওয়া ব্যাক্তিরা রোহিঙ্গা কি না সে বিষয়টি এখন সামনে চলে আসছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, সার্ভারটি হ্যাকারা কি নিজ দক্ষতা এবং যোগ্যতা দিয়ে হ্যাক করেছে, নাকি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কারও নেপথ্য সহযোগিতা ছিল। এ প্রশ্নটিই এখন আলোচনার শীর্ষে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। চট্টগ্রামের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল কক্সবাজারের যোগাযোগটা বেশি হওয়ায় এটি আরও বেশি স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে।  জন্মনিবন্ধন সার্ভারের ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের আরও বেশি সচেতন, দায়িত্ববান এবং সতর্ক হয়ে কাজ করা উচিত। এ ব্যাপারে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেলের সাবেক পরিচালক ড. হানিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘জননিরাপত্তামূলক সার্ভারগুলোর ক্ষেত্রে চারটি প্রটেক্টকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর মধ্যে টু ফ্যাক্টর অথেকটিফিকেশন নিশ্চিত করা, জননিরাপত্তামূলক সফটওয়ারে নির্দিষ্ট কম্পিউটার ছাড়া অন্যটি থেকে প্রবেশ করতে না পারার ব্যবস্থা রাখা, ম্যাক এড্রেস বাইন্ডিং দেওয়া এবং কোন ব্যবহারকারী কোন জায়গা থেকে কম্পিউটারে প্রবেশ করছে তার বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য লগইন ফাইলে সেভ থাকা। এ চারটি বিষয় নিশ্চিত করা গেলে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ সার্ভার হ্যাকের মতো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম।’ কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রমের অতিরিক্ত উপকমিশনার আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, ‘চসিকের সাধারণ ডায়েরির প্রেক্ষিতে আমরা বন্দর, পতেঙ্গা ও খুলশী এলাকার ওয়ার্ডগুলোতে ছায়া তদন্ত শুরু করি। এরপর একটি চক্রের সন্ধান পাই।  প্রাথমিকভাবে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে তাদের মূল হোতাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে গ্রেফতাররা অনেক রাঘববোয়ালের নাম বলেছে। তদন্তের স্বার্থে আমরা সেসব নাম এখন প্রকাশ করছি না। সময় মতো সব প্রকাশ করা হবে। বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই স্পর্শকাতর এই ইস্যু নিয়ে আমরা সতর্কতার সঙ্গে তদন্তের কাজ করছি। চসিকের প্রোগ্রামার মোহাম্মদ ইকবাল হাসান বলেন, চসিকের পক্ষ থেকে সার্ভার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে সার্ভার হ্যাক করে ইস্যু করা জন্ম সনদগুলো বাতিলের জন্য আবেদন করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল তারা ৬৮০টি জন্মসনদ বাতিল করার বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছে। আজ হয়তো এ ব্যাপারে চিঠি আসতে পারে।  

১৬ দিনে ৬৮০টি জন্ম সনদ ইস্যু : চসিকের জন্মনিবন্ধন আইডি হ্যাক করে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ১৬ দিনেই ৬৮০টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করেছে হ্যাকাররা। গত ৮ জানুয়ারি ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে ৪০টি, এরপর ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের ১০ জানুয়ারি ১৮টি, ১৯ জানুয়ারি ৫০টি এবং ২২ জানুয়ারি ৩৪১টি, ৮ জানুয়ারি আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের আইডি হ্যাক করে ৪টি, গত ১০ ডিসেম্বর ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আইডি হ্যাক করে ১০টি এবং ২১ ডিসেম্বর ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের আইডি হ্যাক করে ৮৪টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবারও ১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৩৩টি জন্ম সনদ ইস্যু করা হয়। প্রতিটি সনদের জন্য নেওয়া হতো ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। তবে পুরো সার্ভার হ্যাক করে করা হয়েছে নাকি পাসওয়ার্ড দিয়ে তাতে প্রবেশ করেছে, বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। গ্রেফতারদের কাছ থেকে জাল জন্ম নিবন্ধনের কাজে ব্যবহৃত চারটি সিপিইউ, তিনটি মনিটর, একটি স্ক্যানার, দুটি প্রিন্টার ও চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। গত মঙ্গলবার তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পর তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর