বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে কমছে কৃষিজমি

গড়ে উঠছে নানা প্রকল্প, বাড়ছে জমির দাম

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীতে কমছে কৃষিজমি

রাজশাহীতে দিন দিন কমছে কৃষি জমি। এক দশকে রাজশাহী মহানগরীতে বেড়েছে জমির দাম। আধুনিক নগরায়নের পথে উন্নয়ন কাজ চলতে থাকায় অনেকে এখন রাজশাহীতে স্থায়ী বসবাসের ঠিকানা গড়ছেন। ফলে গড়ে উঠছে আবাসন প্রকল্প। আর এতেই দিন দিন কমতে শুরু করেছে আবাদি জমির পরিমাণ। বেশি লাভের আশায় কৃষি জমি নষ্ট করে গড়ে তুলছে আবাসিক এলাকা। দেশের বিভিন্ন জেলার চেয়ে রাজশাহীর রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ হওয়ায় এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন বাইরে থেকে চাকরি করতে আসা সরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরা। এ সময় তারা জমির মালিকদের কাছে ভালো ও আকর্ষণীয় দাম পরিশোধের মাধ্যমে কিনে নিচ্ছেন প্লট কিংবা ফ্ল্যাট। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের দেওয়া তথ্য মতে, ৯৬.৭২ বর্গকিলোমিটারের সিটি করপোরেশন ৩১টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। তবে আয়তনের অর্ধেক ছিল আবাদি জমি। আর অর্ধেক জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল ঘরবাড়ি, অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নগরীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে আবাসিক এলাকার সংখ্যা। ফলে আবাদি জমিগুলো পরিণত হচ্ছে আবাসিক এলাকায়। ২০১২ সাল থেকে রাজশাহীতে অপরিকল্পিতভাবে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠতে শুরু করে। নগরী থেকে গোদাগাড়ী পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশ, কাশিয়াডাঙ্গা থেকে দারুশা হয়ে কাঁকনহাট, নওহাটা থেকে মোহনপুর, বিনোদপুর থেকে পুঠিয়ার রাস্তার দুই পাশে জমি এখন প্লট হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। কিছু ব্যক্তি সাধারণ দামে এসব জমি কিনে প্লট করে বেশি দামে বিক্রির সাইন বোর্ড ঝুলিয়েছেন। বিশেষ করে নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থেকে রাজাবাড়ি হয়ে গোদাগাড়ী পর্যন্ত রাস্তার দুধারে প্লট আকারে বিক্রি করা জমির পরিমাণ বেশি। জানা গেছে, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) নগর পরিকল্পনায় জমিকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে কৃষি, বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা। কৃষি জমি আবাসিক হিসেবে বা শিল্প-কলকারখানা স্থাপনে ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি বাণিজ্যিকভাবেও ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এখন কৃষি জমি আবাসিকভাবে প্লট আকারে বিক্রি হচ্ছে। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পক আজমেরি আফসারী বলেন, ‘আমরা নগর পরিকল্পনায় যেসব এলাকা চিহ্নিত করেছি তার বাইরে কৃষি জমি কেউ প্লট আকারে বিক্রি করলে তা অবৈধ। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যদি কেউ কৃষি জমিতে প্লট বানিয়ে বিক্রি করে তাহলে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কয়েকদিন আগে গোদাগাড়ীতে যাওয়ার সময় দেখেছি। রাস্তার ধারে কৃষি জমি প্লট আকারে বিক্রির জন্য সাইন বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এভাবে প্লট আকারে কৃষি জমি বিক্রি করা অবৈধ। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিয়েছেন।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘কৃষি জমিতে প্লট বা পুকুর খনন করা হলেও আমরা জানতে পারি না। এমনকি কেউ কৃষি অফিসে অভিযোগও করে না। আবার জানলেও আমাদের কিছু করার থাকে না। কারণ কৃষকের জমি তিনি কীভাবে বিক্রি করবেন সেটা তার ব্যাপার।’

রাজশাহী রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান কাজী বলেন, কৃষি জমির ওপর একের পর এক বহুতল ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে। আবার অনেকে কম দামে কৃষি জমি কিনে বেশি দামে প্লট করে বিক্রি করছেন। এতে দিন দিন কৃষি জমি কমছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, বর্তমানে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের রাস্তাঘাট সম্প্রসারণের কাজ চলছে। নগরীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকা সৃষ্টির জন্য আবাদি জমি কমছে। তবে কৃষি জমি নষ্ট না করে কীভাবে মানুষের আবাসন গড়ে তোলা যায়, তা নিয়ে সিটি করপোরেশন কাজ করছে। নাগরিকদেরও এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর