বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কাজ শেষ না হতেই চূড়ান্ত রিপোর্ট

আরডিএর ২০৬ কোটি টাকার প্রকল্প

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীতে সবচেয়ে বড় বাজেটের কাজ চলছে নাটোর রোড (রুয়েট) থেকে রাজশাহী বাইপাস প্রকল্পের চার লেন রাস্তাসহ ফ্লাইওভার নির্মাণ। গত বছরের জুনে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আট মাস পার হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। বরং প্রকল্পের কাজ নিয়ে একের পর এক তথ্য গোপন করা হয়েছে। জানা গেছে, আরডিএর তত্ত্বাবধায়নে প্রায় ২০৬ কোটি টাকার এ কাজ চলছে। এর মধ্যে ১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ফ্লাইওভারসহ রুয়েটের পূর্ব-দক্ষিণ কর্নার থেকে মেহেরচন্ডি, চকপাড়া ও খড়খড়ি বাইপাস পর্যন্ত চার লেন বিশিষ্ট ৫ কিলোমিটার বিটুমিন কার্পেটিং রাস্তা, ৯ হাজার ৪১০ মি. আরসিসি ড্রেন, ৯টি আরসিসি কালভার্ট, একটি ৮০৫ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ওভারপাস নির্মাণ, ১০ কিলোমিটার পানি সরবরাহ লাইন, ১০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন, ১০ কিলোমিটার গ্যাস সরবরাহ লাইন ও টিঅ্যান্ডটি লাইন স্থাপন। এ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোমেন লিমিটেড। প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের জুনে। কিন্তু কাজই শেষ হয়নি। আরডিএর নির্বাহী প্রকৌশলীর দেওয়া তথ্য মতে, ওভারপাস, চার লেন সড়ক, ড্রেন, কালভার্ট, রাস্তা ও ওভারব্রিজের লাইটিং ও টিঅ্যান্ডটি লাইন স্থাপন হয়েছে শতভাগ। কাজ শেষ দেখিয়ে গত বছরের ১৯ জুলাই ও ২৪ জুলাই দুই দফায় প্রতিবেদন দাখিল করেছেন প্রকল্প পরিচালক আরডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল তারিক। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রুয়েট থেকে বাইপাস পর্যন্ত যে রাস্তা হচ্ছে তার ওপর ভরাট ফেলানো কাজ চলছে। কিছু কিছু জায়গায় ইট খোয়া ফেলা শুরু হয়েছে। রুয়েটের দক্ষিণ পাশ থেকে প্রাচীরের শেষ পর্যন্ত ড্রেনের কাজ চলছে। ফ্লাইওভারের লাইটিংয়ের শুরুই হয়নি। রুয়েট থেকে বাইপাস ৫ কিলোমিটার চার লেন সড়কের ড্রেনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৩ কিলোমিটার। ১ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ সবেমাত্র শুরু হলেও বাকি ১ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ শুরুই হয়নি। ৫ কিলোমিটার রাস্তার কোথাও কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু হয়নি। রাস্তার ধারের যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো সবেমাত্র ভাঙা হয়েছে। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর এ বিষয়ে আরডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল তারিক বলেছিলেন, কাজ শেষ হওয়ার দুই মাস আগে আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে থাকি। তাই জুলাই মাসে কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছি। আর কাজ তো হয়েই গেছে, বাকি কাজ সামনে ডিসেম্বর মাসে শেষ হবে। কিন্তু জুলাই মাসে কাজ শেষ হওয়ার প্রতিবেদন দেওয়ার পর অতিবাহিত হয়েছে আরও আট মাস। তারপরও ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়নি। এদিকে নাটোর রোড (রুয়েট) থেকে রাজশাহী বাইপাস প্রকল্পের তথ্য চেয়ে আরডিএ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়। এই প্রকল্পের ব্যাপারে আরডিএ কর্তৃপক্ষের কাছে যেসব তথ্য চাওয়া হয় তার সম্পূর্ণ তথ্য দেয়নি। আবার যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা পূর্বের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে কোনো মিল নেই। আরডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল তারিক স্বাক্ষরিত তথ্যে বলা হয়েছে, নাটোর রোড (রুয়েট) বাইপাস পর্যন্ত সংযোগ সড়ক শীর্ষক প্রকল্পের বর্তমান কাজগুলো ডিফেক্ট লাইয়েবিলিটি পিরিয়ড (Defect Liability Period) এবং এর আওতায় যে কাজগুলো চলমান, তা নির্ধারিত ডিফেক্ট লাইয়েবিলিটি পিরিয়ডের আগে সম্পন্ন হবে। চলমান রাস্তার কাজে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে, যার কারণে কাজ সম্পন্ন হয়নি। অথচ তিনি গত বছরের জুলাই মাসে কাজ সম্পন্ন হওয়ার প্রতিবেদন দিয়েছেন।

এ প্রকল্পের ব্যয়ের হিসাব বিবরণীর তথ্য দিয়েছেন তা হলো, এই প্রকল্পের মোট টাকার পরিমাণ প্রায় ২০৬ কোটি। এখন পর্যন্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়েছে প্রায় ১৮৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকার মতো। অবশিষ্ট আছে ১৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এই টাকা কাজ শেষ হলে ঠিকাদারকে প্রদান করা হবে। কিন্তু ব্যাংক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে এই প্রকল্পের হিসাব বিবরণীতে (ব্যাংক স্টেটমেন্ট) দেখা যায়, এখনো এই প্রকল্পের অ্যাকাউন্টে প্রায় সাড়ে ১৭ থেকে ১৮ কোটি টাকা অবশিষ্ট আছে।

এ ছাড়াও গত আট বছর আগে ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। কিন্তু সেখানে ১৭ কোটি টাকার কোনো হিসাব নেই। গত বছরের ২৭ নভেম্বর রাজশাহী জেলা প্রশাসন ওই ১৭ কোটি টাকার কাগজপত্র চেয়ে আরডিএ কর্তৃপক্ষকে নোটিস করেছিল। এই টাকা কোথায় ব্যয় হয়েছে, নাকি এখনো ওই টাকা ব্যাংকে আছে তা জানতে চেয়ে জেলা প্রশাসন চিঠি দেয় আরডিএ-কে। এমনকি এই টাকা সমন্বয়ের কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সেই ১৭ কোটি টাকা কোথায় তা আরডিএ কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনকে জানাতে পারেনি। তবে প্রকল্প আট মাস আগে শেষ হলেও এখনো ভূমি অধিগ্রহণের টাকা শোধ হয়নি।

আরডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল তারিক বলেন, এগুলো নিয়ে আমার কোনো কথা নেই। আপনি তথ্য চেয়েছেন, তথ্য দিয়েছি। আমরা কাজ করছি এটাই শেষ কথা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর