শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

চাহিদা পূরণে ব্যর্থ রাজশাহী ওয়াসা

দাম বাড়লেও সুপেয় পানি মিলছে না, পানিতে ক্ষতিকর কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

চাহিদা পূরণে ব্যর্থ রাজশাহী ওয়াসা

রাজশাহীবাসীর দীর্ঘদিনের আশা ছিল সুপেয় পানির। সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে আলাদা হয়ে ওয়াসার কার্যক্রম শুরু হয়। ওয়াসা নগরবাসীর পানির চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে- এমন প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেই আশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে রাজশাহী ওয়াসা। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ওয়াসার কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নন নগরবাসী। গ্রাহকদের অভিযোগ, ওয়াসার সরবরাহ করা পানি মানসম্মত নয়। কোনো কোনো সময় এত নোংরা পানি সরবরাহ করা হয়, যা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। খাওয়া তো দূরে থাক, অন্য কাজও করা যায় না। হলুদ বা কালো এবং দুর্গন্ধযুক্ত এই ময়লা পানি নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগের শেষ নেই। বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে না, উল্টো গত বছর থেকে দাম বাড়ানো হয়েছে। আগে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির জন্য আবাসিকে ২ টাকা ৭০ পয়সা ও বাণিজ্যিকে ৪ টাকা ৫৪ পয়সা দিতে হতো। এখন গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি। তারপরও সেবার মান বাড়েনি। উল্টো ওয়াসার পানিতে পাওয়া গেছে শরীরের জন্য ক্ষতিকর কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া। মহিষবাথান এলাকার অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষিকা শামীম আরা জানান, ওয়াসার পানি ব্যবহারের একেবারে অনুপযোগী। এই পানি পান করা দূরে থাক, ব্যবহার করা যায় না। কোনো কোনো সময় কালো শেওলা পাওয়া যায় পানির মধ্যে। বিষয়টি ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না। নগরীর কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহন কর্মকার বলেন, ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি পান করার মতো নয়। ময়লা ছাড়াও পানিতে প্রচুর আয়রন আছে। ওয়াসার পানি সংরক্ষণ করলে লাল রং ধারণ করে। রানীনগর এলাকার গৃহবধূ সাঈদা রায়হানা বলেন, এই পানি কেবল রান্নাবান্না ও ধোয়া-মোছার কাজে লাগে। ওয়াসার পানিতে গোসল করাও যায় না। একটানা ১০ দিন গোসল করলে চুল নষ্ট হয়ে যায়। মানুষ নিরুপায় হয়েই এই পানি ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানায়, পানি সরবরাহ লাইনের ত্রুটির কারণে কোনো কোনো এলাকায় ঘোলা বা গন্ধযুক্ত পানি পেয়ে থাকেন গ্রাহকরা। খোঁজ নিয়ে এসব অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। এটা ড্রেনের ময়লা। তবে ওয়াসার একটি সূত্র বলছে, পানির সরবরাহ পাইপ স্থাপনের পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এই পাইপগুলো পরিষ্কার না করায় এবং বিভিন্ন স্থানে লিকেজের কারণে এই ধরনের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। শোধন ছাড়াই নগরবাসীকে কথিত সুপেয় পানি সরবরাহ করছে রাজশাহী ওয়াসা। তথ্য মতে, এই পানির ৯৭ শতাংশ জোগান আসছে ভূগর্ভ থেকে। রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘পানি নিয়ে অভিযোগ থাকলেও পানির মান ভালো। সুপেয় পানি সরবরাহে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ দৈনিক ১২৫ মিলিয়ন লিটার চাহিদার বিপরীতে ওয়াসা ১০৪ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহ করে। পানিতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কথা স্বীকার করে এই কর্মকর্তা বলছেন, নাগরিক সেবা ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে কাজ করছেন তারা।

জানা গেছে, নগরীতে ৫টি পানি শোধনাগার আছে। পদ্মার পানি নির্ভর শ্যামপুরে একমাত্র ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগারটি সচল থাকে বছরে চার মাসের মতো। বাকি চারটি ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগার চালুর কিছুদিন পর থেকেই বিকল। এই অবস্থায় ৯৬টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে সরাসরি ভূ-গর্ভস্থ পানি গ্রাহককে সরবরাহ করছে ওয়াসা। সূত্র আরও জানায়, ৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৩০ জন অধিবাসীর এই শহরে ওয়াসার পানি সরবরাহের আওতায় এসেছে ৪ লাখ ৪ হাজার ২১০ জন। শতকরা হিসাবে পানি ভোগীর আওতায় ৭৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। ওয়াসার গ্রাহক ৪২ হাজার ৬৮০। সবমিলে প্রতিদিন পানির চাহিদা ১১ দশমিক ৩৩ কোটি লিটার। কিন্তু উৎপাদিত হচ্ছে ৭ দশমিক ৭৮ কোটি লিটার। এর ৯৬ শতাংশই আসছে ভূগর্ভস্থ থেকে। জনপ্রতি দৈনিক ১৯০ দশমিক ৭৪ লিটার পানি উৎপাদন হলেও ব্যবহার হচ্ছে ১২৬ দশমিক ৩০ লিটার। নগরজুড়ে ওয়াসার পানি সরবরাহ লাইন আছে ৭১২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। দৈনিক ৫ দশমিক ১০ কোটি লিটার পানি বিক্রি করছে ওয়াসা। সংস্থাটি দিনে ১২ ঘণ্টা পানি সরবরাহ করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর