মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

সংকটে কর্ণফুলী নদীর নাব্য

গার্বেজ ট্র্যাপ বসানোর নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের, প্রতিদিন পড়ছে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

সংকটে কর্ণফুলী নদীর নাব্য

নগরের কঠিন, পয়ঃ ও তরল বর্জ্যে নাব্য সংকটে পড়েছে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাণ খ্যাত কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং চলছে। একই সঙ্গে নদীতে প্রতিনিয়তই পড়ছে নগরের কঠিন, পয়ঃ ও তরল বর্জ্য। ফলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে ড্রেজিংয়ের সফলতা নিয়ে। সেই সঙ্গে কমছে এ নদীর নাব্য। হচ্ছে দূষণ। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ধ্বংস হচ্ছে মৎস্যসম্পদ। হুমকিতে জীববৈচিত্র্য।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট থেকে বাকলিয়া চর পর্যন্ত বর্জ্য অপসারণ ও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য বৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু একদিকে ড্রেজিং অন্যদিকে নিয়মিতই নদীতে পড়ছে নানা ধরনের বর্জ্য। ফলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে প্রকল্পের সুফল পাওয়া এবং নাব্য ধরে রাখা নিয়ে। এমন অবস্থায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিটি করপোরেশন শাখা-২ গত ২২ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) জরুরি ভিত্তিতে সংযোগ খালগুলোর মুখে গার্বেজ ট্র্যাপ (বর্জ্য আটকে পানি যাওয়ার ব্যবস্থা) বা নেট স্থাপনের জন্য বলে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার ও কর্ণফুলী নদীর বর্জ্য অপসারণ এবং ড্রেজিং প্রকল্পের পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, বন্দরের নিজস্ব একটি ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের চারটি- এ মোট পাঁচটি ড্রেজার দিয়ে দৈনিক প্রায় ২৫ টন বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। কিন্তু নগরের দৈনিক প্রায় ৪০ টন বর্জ্য নদীতে পড়ছে। এ কারণে ড্রেজিংয়ের সুফল নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেয়। তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে প্রায় ৩৭টি খালের সংযোগ আছে। এসব খাল দিয়ে প্রতিনিয়তই নগরের বিভিন্ন প্রকারের বর্জ্য কর্ণফুলীতে গিয়ে পড়ে। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কর্ণফুলী নদীর সংযোগ খালগুলোর মুখে গার্বেজ ট্র্যাপ বসানোর বিষয়টি নিয়ে একাধিক সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। নদী দূষণমুক্ত রাখতে এটি জরুরিও। তবে এটি সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। এ নিয়ে আলাদা প্রকল্পও দরকার। তাই কর্ণফুলীর সংযোগ খালগুলোর মুখে গার্বেজ ট্র্যাপ বসানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগটি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে এটি আরও অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন যেন কাজটি দ্রুত বাস্তবায়ন করে। এটি যত দ্রুত হবে, কর্ণফুলী তত আগেই দূষণ থেকে বাঁচবে। কারণ দেশের অর্থনীতি, বন্দর, জীবন, প্রকৃতি ও পরিবেশের স্বার্থে কর্ণফুলী বাঁচানোর কোনো বিকল্প নেই। জানা যায়, গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর চুয়েট কর্ণফুলী নদী নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করে।

গবেষণায় বলা হয় : চট্টগ্রাম নগরে প্রতিদিন ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হিসেবে ২৪৯ টনই হচ্ছে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য। এর মধ্যে ৩৫.৬১ ভাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এসব বর্জ্য প্রতিদিনই নানাভাবে পড়ছে কর্ণফুলীতে। এ কারণে ছড়াচ্ছে রোগবালাই, বাড়ছে জলাবদ্ধতা। নানা প্রজাতির মাছ নদীর তলদেশ কিংবা অন্যান্য স্তরে ভাসতে থাকা এসব বর্জ্য খাচ্ছে। এর মাধ্যমে প্লাস্টিকে থাকা ক্ষতিকর কেমিক্যাল মাইক্রোপ্লাস্টিক মিশে যাচ্ছে মানুষের শরীরে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসাও একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। এতে বলা হয় : বর্তমানে নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ২৮৮ মিলিয়ন লিটার বর্জ্য পানি নিঃসৃত হয়ে নদীতে পড়ছে। ২০৩০ সালে এর পরিমাণ প্রতিদিন ৫১৫ মিলিয়ন লিটার হবে। এ ছাড়া নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৫৩৯ ঘনমিটার ফিক্যাল স্ল্যাজ সেপটিক ট্যাংকে জমা হচ্ছে, যা ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন প্রায় ৭১৫ ঘনমিটার হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর