শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে পানি সংকট কাটছেই না

কখনো লবণাক্ততা, কখনো শেওলা, অপেক্ষা বৃষ্টির

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে পানি সংকট কাটছেই না

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির অন্যতম উৎস কাপ্তাই লেকে গত মার্চ মাসে পানি স্বল্পতা দেখা দেয়। ফলে সরবরাহে বিঘ্নতা ঘটে। হালদা নদীর পানিতে দেখা দেয় স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ছয়গুণ বেশি লবণাক্ততা। এ কারণেও বিঘ্ন ঘটে পানি সরবরাহে। এপ্রিলের শুরুতে কর্ণফুলী নদীতে কাপ্তাই লেক থেকে ভেসে আসে শেওলা। ফলে কর্ণফুলী নদীর পানিনির্ভর ওয়াসার দুটি পরিশোধনাগারে কমে যায় উৎপাদন। এভাবে গত প্রায় তিন মাস ধরে নানা সংকট-সমস্যায় অনিয়মিতভাবেই পানি পাচ্ছে নগরবাসী। ওয়াসা রেশনিং পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ করলেও তাতে চাহিদা মিটছে না। ফলে গ্রীষ্মের তপ্ত খরতাপের মধ্যেই নগরবাসীকে পানির চরম সংকট নিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।     

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরে ওয়াসার পানি পাওয়া না যাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন নগরবাসী। কোথাও দেখা মিলে না পানির, কোথাও অতিরিক্ত লবণাক্ততা, কোথাও শ্যাওলাযুক্ত পানি। এসব পানি ব্যবহার ও খাওয়ার অনুপযোগী। অনেকে পান করছেন ক্রয় করে। তাছাড়া এসব পানি পান করে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে। নগরের খতিবের হাট, বহদ্দারহাট, খাজা রোড এলাকা, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার এলাকা, কর্নেলহাট সিডিএ আবাসিক এলাকা, বাদুরতলা, একে খান এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ লবণাক্ততার কারণে পানি পান করতে পারছেন না।

জানা যায়, শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১ ও ২ থেকে দৈনিক পানি উৎপাদন হয় প্রায় ২৮ কোটি লিটার। কিন্তু এখন নদীতে শেওলা জমার কারণে এ প্রকল্প থেকে পানি আসছে ২০ কোটি লিটারের কম। একই সঙ্গে লোডশেডিংয়ের কারণে পানি সরবরাহে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় গত ১৭ এপ্রিল  ওয়াসার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চলমান গ্রীষ্ম মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় কাপ্তাই লেক এবং কর্ণফুলী উপনদী থেকে প্রচুর পরিমাণে শৈবাল যুক্ত পানি কর্ণফুলী নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে শেখ হাসিনা ১ ও ২ পানি শোধনাগার হতে উত্তোলিত পানিতে শৈবালের পরিমাণ অত্যধিক হওয়ায় তা পানি শোধনাগার  প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। এমতাবস্থায় উক্ত পানি শোধনাগার দুটিতে উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ হ্রাস পেয়েছে। ফলে শহর এলাকায় পানি সরবরাহ বিঘ্ন  ঘটছে। ওয়াসা এই সমস্যা লাঘবে কাজ করছে।’

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, পানির লবণাক্ততা, পানি না পাওয়া কিংবা শেওলার বিষয়গুলো নতুন নয়। তাই শুষ্ক মৌসুম বা মৌসুম ভিত্তিক পানি সরবরাহ বিষয়ে ওয়াসার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকা উচিত। কিন্তু তারা সেটি করছে না। এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান  চাই। কেবল বড় বড় প্রকল্প নিয়ে নগরবাসীকে  স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আমরা স্বপ্ন নয়, বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা চাই।  

ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, জোয়ারের সময় পানিতে লবণাক্ততা বেশি থাকে। তাই ভাটার সময় প্রয়োজন অনুপাতে পানি সংগ্রহ করে উৎপাদন করা হয়। তাছাড়া, বিদ্যমান গভীর নলকূপ থেকেও পানি সংগ্রহ করে পরিশোধন করা হচ্ছে। তবে কয়েকদিন পর অমাবস্যা। এরপর জোয়ারের তীব্রতা কমে যাবে। তখন পানিতে লবণাক্ততা কমবে। আশা করি, শিগগিরই এ  সমস্যা নিরসন হবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ওয়াসার আবাসিক সংযোগ ৭৮ হাজার ৫৪২টি ও বাণিজ্যিক সংযোগ ৭ হাজার ৭৬৭টি। ৭৭০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে ওয়াসা পানি সরবরাহ করে। তবে অধিকাংশ লাইনই পুরনো। বর্তমানে নগরে দৈনিক পানির চাহিদা ৪৬ থেকে ৪৮ কোটি  লিটার। ওয়াসা চারটি পানি শোধনাগার থেকে দৈনিক প্রায় ৪৭ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ থেকে দৈনিক ২৮ কোটি লিটার পানি। মদুনাঘাট পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার এবং মোহরা পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার।

সর্বশেষ খবর