বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

শুধু প্রযুক্তির ব্যবহারই স্মার্টনেস নয়

ঢাবিতে সেমিনারে বক্তারা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

শুধু প্রযুক্তির ব্যবহারই স্মার্টনেস নয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে গতকাল সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শুধু প্রযুক্তি ব্যবহারই ‘স্মার্টনেস’ নয়। বরং অর্থের অপচয় না করে সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহারে বিশ্ব নাগরিক হওয়াই স্মার্টনেস। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রয়োজন স্মার্ট যুবসমাজ। এ জন্য দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী তথা নারীদের কর্মক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে ‘এম্পাওয়ারিং ফিউচার : ইয়ুথ অ্যাজ দ্য আর্টিটেক্ট অব স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এই সেমিনারের আয়োজন করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। মূল বক্তা ছিলেন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. তানিয়া হক।

মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, স্মার্টফোননির্ভর জীবনই স্মার্টনেস নয়। বঙ্গবন্ধু পঞ্চাশের দশকেই ভেবেছিলেন, পুরুষরা যা করতে পারে, নারীরাও তা করতে পারে। এই অগ্রসরমান চিন্তা, সেটি যদি এই সময়ের তরুণরা ধারণ করতে পারে, সেটাই হবে স্মার্টনেস। ধর্মের অপব্যাখ্যার কারণে নারীদের একটি অংশ কর্মক্ষেত্রের বাইরে থাকছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাধা তৈরি করছে। এক্ষেত্রে রক্ষণশীলতা থেকে উত্তরণের সময়ে আমাদের সহনশীল হতে হবে। কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ তৈরিতে সহযোগিতামূলক আচরণ করতে হবে। এই পরিবর্তনটা অবশ্যই দ্রুতগতিতে করতে হবে। কেননা, ২০৩০ সালের পর থেকে ‘জনমিতি লভ্যাংশে’র সুবিধা কমে যাবে। এক্ষেত্রে জেন্ডার স্টাডিজ সেন্টারকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়ে যেসব প্রান্তিক নারী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে তাদের স্বাগত জানানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এক্ষেত্রে ষাটের দশকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর এ দশকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনাকে অমূলক মনে করেন তিনি। এমন নারীদের মূলধারার কর্মক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করার কথা বলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, স্মার্টনেসের সংজ্ঞা আগে ঠিক করতে হবে। প্রযুক্তি কিন্তু স্মার্টনেসের একমাত্র চিহ্ন নয়। স্টিভ জবস বলেছেন, একটি ১০০ ডলারের ঘড়ি যে সময় দেয়, এক লাখ ডলারের ঘড়িও সে সময় দেয়। তাহলে পার্থক্যটা কোথায়? আমরা কীভাবে স্মার্ট হব? আমরা স্মার্ট হব অর্থের অপচয় না করে সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার করে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে।

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, গ্লোবালাইজেশনের যুগে টিকে থাকতে হলে স্মার্ট হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। জনমিতি লভ্যাংশের সঙ্গে সঙ্গে যদি অর্থনৈতিক লভ্যাংশ না আসে, আমরা পিছিয়ে যাব। দেশকে এগিয়ে নিতে যে ধরনের অবকাঠামো তৈরি করা দরকার, তা প্রধানমন্ত্রী তৈরি করেছেন। সেখানে প্রবেশে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার আছে।

অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, স্মার্টনেস একটি আপেক্ষিক ধারণা। কেননা, সময়ের সঙ্গে এতে পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান সময়ে এসে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষমতাকে স্মার্টনেস বলা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত সমাজতান্ত্রিক সমাজে স্মার্টনেস হচ্ছে বিশ্বজনীন মানবতার মুক্তি, মানুষকে ভালোবাসা। আমরা যাই-ই করি, দিনশেষে আমাদের ফিরে যেতে হবে সেই জায়গায়-সবার ওপর মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নেই। এটা আমরা জাতির জনকের আদর্শেও দেখি।

স্বাগত বক্তব্যে ড. তানিয়া হক বলেন, বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আর এর প্রধান কান্ডারি হলো, আমাদের তরুণরা। তাই তরুণদের আগামী সময়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। জ্ঞান-মেধা-সততা ও দক্ষতার সমন্বয়ে আমরা এমন আত্মবিশ্বাসী তরুণ সমাজ চাই, যারা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ন্যায় ও অধিকারের বিষয়ে আপসহীন হবে।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে স্মার্ট বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার মাহফুজা লিজা, কণ্ঠশিল্পী সোমনূর মানির কোনাল ও টেন মিনিট স্কুলের কনসালটেন্ট সাকিব রশিদ প্রমুখ। এ ছাড়াও স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে নিজেদের ভাবনা তুলে ধরেন উইম্যান অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিম নওশীন ফারিহা ও রুবায়েত হাসান শাওন।

 

 

সর্বশেষ খবর