চট্টগ্রামে বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। ঘটে প্রাণহানি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পাহাড় কাটা, মাটির বালিজাতীয় গঠনসহ নানা কারণে পাহাড়ধস ঘটে। জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান-কখনো পাহাড় কাটা থেমে থাকেনি। পাহাড় কেটে তৈরি করা হয় বাংলো, অফিস-আদালত ও নানা স্থাপনা। বাংলাদেশ স্বাধীনের পরও পাহাড় কাটা থেমে নেই। চট্টগ্রামে ৯০-এর দশক থেকে পাহাড় কাটা রীতিমতো মহোৎসবে পরিণত হয়। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৬০ সালে নগর ও আশপাশে ২০০ ছোটবড় পাহাড় ছিল। বেশির ভাগ পাহাড়ের মালিক সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। ৫৭ শতাংশ পাহাড় নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৮৮টি পাহাড় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আংশিক কাটা হয়েছে ৯৫টি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. মুহিবুল্লাহ বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়গুলো বালিজাতীয় মাটির গঠন এবং কঠিন শিলার অভাব হওয়ায় ভারী বর্ষণ হলেই মাটির সহনক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে ধসে পড়ে পাহাড়। গঠনগত কারণে গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপে পাহাড়গুলোয় ছোট ছোট ফাটলের সৃষ্টি হয় এবং ফাটলসংলগ্ন স্থানে ক্ষয় শুরু হয়। পাহাড়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় বৃষ্টির পানির সঙ্গে ক্ষয়ীভূত পদার্থগুলো নিম্ন-ঢালে সবেগে চাপ প্রয়োগ করে। বৃষ্টির পানি এসব ফাটলে ঢুকে বৃহদাকার ধস নামায়। পাহাড় ধসের এ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া জটিল করে তুলেছে মানুষের কর্মকান্ড।
গবেষণাসূত্রে জানা যায, পাহাড় ধসের কারণে পরিবেশে নানানরকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর মধ্যে আছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও প্রাকৃতিক ড্রেনেজ সিস্টেম নষ্ট হওয়া, নগরীর নান্দনিক সৌন্দর্য হারানো, নিম্নভূমি ভরাট হওয়া, জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি, বায়ু ও ধূলি দূষণ বৃদ্ধি, আশঙ্কাজনক হারে ভূমিক্ষয় হওয়া, ধুলাবালি বায়ুতে মিশে দূষণ ঘটানো এবং প্রাণী, উদ্ভিদ ও মৃত্তিকাস্থ ক্ষুদ্র জীবাণু ধ্বংস হয়ে বাস্তুসংস্থান নষ্ট হওয়া।