আলু চাষাবাদের ভরা মৌসুমে সার নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের কৃষক। সার সংগ্রহ করতে গিয়ে চাষিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একই সঙ্গে গুনতে হচ্ছে বেশি টাকা। চাষিদের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতারা ডিলারদের বরাদ্দ থেকে অধিকাংশ সার নিয়ে যাচ্ছেন। সেই সার তারা আবার বেশি দামে বিক্রি করছেন চাষিদের কাছে। ডিলাররা বলছেন, তারা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ঠিকমতো সার দিতে পারছেন না চাষিদের।
এ ক্ষেত্রে তারা অসহায়। রাজশাহীর তানোর, পবা ও মোহনপুর উপজেলা এলাকার আলু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে আলুর চড়া দামের কারণে এবার আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। এ কারণে আমন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে জমি তৈরি করছেন চাষিরা। আলুবীজ সংকটের মধ্যে এবার চাষিদের সার কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোথাও চাহিদামতো সার পাচ্ছেন না তারা। ক্ষেত্রবিশেষে বস্তা প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে বেশি দিয়ে সার সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাদের। ফলে আলু আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আলু ফলনের এ লক্ষ্যমাত্রা সর্বোচ্চ।
তানোর উপজেলার কামারগাঁও এলাকার আলু চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা আলু আবাদে দুই বস্তা পটাশ, এক বস্তা টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও এক বস্তা ডিএপি দানাদার সারের প্রয়োজন। এতে আলুর ভালো ফলনের আশা থাকে।
রাজশাহীর কামারগাঁও বাজারের বিসিআইসি সার ডিলার বিকাশ কুমার দাস জানান, এবার চাহিদার তুলনা সারের বরাদ্দ কিছুটা কম। আরও কয়েকজন ডিলার বলেছেন, হঠাৎ করেই স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক নেতাদের আবির্ভাব ঘটেছে। তারা দলের পরিচয় দিয়ে ডিলারদের কাছ থেকে সার নিচ্ছেন বেশি পরিমাণে। তারা চাষি কি না-সেটাও বুঝতে পারছি না।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলাজুড়ে বিসিআইসি অনুমোদিত ২১৯ জন সার ডিলার আছেন। অন্যদিকে বিএডিসি অনুমোদিত ডিলারের সংখ্যা ১৩০ জন। বিসিআইসির এসব ডিলারের মাধ্যমে পটাশ, টিএসপি, ডিএপি ও ইউরিয়া সার বিতরণ করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর মোট ৩৪৮ জন ডিলারের মধ্যে চলতি নভেম্বর মাসে ২ হাজার ৮০৬ মেট্রিক টন টিএসপি ও ৫ হাজার ৪৩২ মেট্রিক টন এমওপি সার বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চলতি মাসের সব সারই উত্তোলন সম্পন্ন হয়েছে। তবে এরপরও সারের সংকট কাটেনি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, চলতি আলু আবাদে চাষিদের চাহিদা অনুযায়ী সার বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে কোথাও বিতরণে কোনো সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। সেটি আমরা নিবিড় তদারকির মাধ্যমে মনিটরিং করছি।