বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের অর্থ দেবে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা)। প্রকল্পের ব্যয় হবে মোট ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেবে জাইকা। আর বাকি ২ হাজার ৪৩৩ কোটি দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক সিনিয়র সহকারী সচিব বলেন, এটা সত্যি যে প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ দিচ্ছে জাইকা, তবে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। চুক্তিপত্র হলেই সব জানা যাবে। তবে আমাদের মিটিং হবে, সেখানে চুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত করা হবে।’ আর বাংলাদেশ রেলওয়ে বগুড়ার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী আসলাম হোসাইন গণমাধ্যমকে জানান, ভারত প্রকল্পে অর্থায়ন করছে না এটা ঠিক। কিন্তু জাইকার অর্থেই বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ হচ্ছে।
এদিকে, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেল প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ বরাদ্দ এবং জাইকার সহযোগিতার খবর শুনে আনন্দে ভাসছে বগুড়াবাসী। বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে ১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের প্রায় ৬ বছর পর এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বগুড়া অংশে খরচ হবে ৯৬০ কোটি টাকা। এতে উচ্ছ্বসিত বগুড়ার মানুষ। বগুড়া জেলা প্রশাসন বলছে, আগামী অর্থবছরে কাজ শুরু হবে। আর শেষ হবে ২০২৯ সালের শেষের দিকে। গত ১৬ জুন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শফিউর রহমানের স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে এসব তথ্য জানা গেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বগুড়া হতে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের অনুকূলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে মূলধন ব্যয় খাতের ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ অর্থ অবমুক্ত করা হলো।
বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের মানুষের ঢাকায় যাতায়াতের প্রধান ভরসা হচ্ছে যমুনা সেতু হয়ে রেল ও সড়কপথ। সরাসরি সিরাজগঞ্জ-বগুড়া ট্রেন চলাচল শুরু হলে ঢাকা-বগুড়া যাত্রায় সময় কমবে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের প্রকৃত দূরত্ব মাত্র ৭২ কিলোমিটার হওয়া সত্ত্বেও দুই জেলার মধ্যে সরাসরি কোনো রেলপথ না থাকায় এ অঞ্চলের ট্রেনগুলোকে গন্তব্যে পৌঁছাতে পাবনা, সান্তাহার, নাটোর ও ঈশ্বরদী হয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে ঢাকা থেকে বগুড়া পৌঁছাতে বর্তমানে ট্রেনে সময় লাগে প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার কমে যাবে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজী জানান, প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় ডুয়েল গেজের দুটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। একটি হলো-বগুড়ার ছোট বেলাইল এলাকা থেকে সিরাজগঞ্জের এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ৭৩ কিলোমিটার এবং অপরটি বগুড়ার কাহালু স্টেশন থেকে রানীরহাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার।