অধিকাংশ শিশুর হাত, পা, মুখ ঝলসে গেছে। কাপড় পুড়ে শরীরের চামড়ায় লেগে গেছে। শিশুদের আর্তনাদে পুরো এলাকা কেঁপে যাচ্ছে। এমন বীভৎস দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
গতকাল উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের সামনে ভয়ার্ত আর করুণ কণ্ঠে এ কথাগুলো বলেন উত্তরা নওয়াব হাবিবুল্লাহ্ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ রহমান।
দুর্ঘটনার পর পরই স্কুল থেকে শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ আহতদের উদ্ধার করে কাছাকাছি দূরত্বে থাকা উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, লুবানা জেনারেল হাসপাতাল ও কার্ডিয়াক সেন্টার, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর গুরুতর আহত রোগীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল এবং জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। গতকাল বিকালে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল থেকে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় অনেক শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল এবং জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। আহতদের জন্য অনেক রক্তের প্রয়োজন। বিশেষ করে নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের সংকট দেখা গেছে। রক্ত দেওয়ার জন্য ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ ভিড় করেন হাসপাতাল এলাকায়। নিজের ব্লাড গ্রুপের নাম লেখা প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, ‘আমি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। স্কুল প্রাঙ্গণে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের এ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে জানতে পেরে এখানে এসেছি। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দিয়ে আহতদের চিকিৎসায় রক্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু আশঙ্কাজনক রোগীদের ঢামেক হাসপাতাল ও বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়ায় ওসব হাসপাতালে শুনছি রক্তের প্রয়োজন পড়ছে। যারা রক্ত দিতে চায় তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমিও যাব ভাবছি।’
হাসপাতালের সামনে ভিড় সামলে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স যাওয়া-আসার জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সি মানুষকে কাজ করতে দেখা যায়। রোগীদের নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কিছুক্ষণ পর পরই রক্তদানে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ঢামেক উদ্দেশে ছুটে যাচ্ছিল অ্যাম্বুলেন্সগুলো।
জানা যায়, দুর্ঘটনার পর পর উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৬০ জন আহত রোগীকে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর বজলুর রহমান আদিল বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালে ১৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে অধিকাংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢামেক হাসপাতাল ও বার্ন ইনস্টিটিউটে রেফার্ড করা হয়। এ ছাড়া একজনের মৃতদেহ রয়েছে। তবে এখনো শনাক্ত করা যায়নি।’
উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালেও দুর্ঘটনার পর পরই রোগীদের নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের ম্যানেজার হাজ্জাজ বিন রশীদ বলেন, আহত হওয়া ১৭ জনকে এ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আহত শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের বয়স ১০-১২ বছরের মতো হবে। আহত ৫-৬ জন শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতাল ও বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেছেন স্বজনরা। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছে। এখন আমাদের হাসপাতালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার আর কোনো রোগী চিকিৎসাধীন নেই।
উত্তরা-১৩ নম্বর সেক্টরের লুবানা জেনারেল হাসপাতাল ও কার্ডিয়াক সেন্টারেও নিয়ে আসা হয় উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর পরই ২৫-৩০ জন আহত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। এর মধ্যে ৭-৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাদের শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। আশঙ্কাজনক রোগীদের পরবর্তীতে ঢামেক ও বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেছেন স্বজনরা। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছে। আহত রোগীদের মধ্যে দুজন মারা গেছে।’
উত্তরা-১১ নম্বর সেক্টরের শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের সামনে প্রয়োজনে রক্ত দেওয়ার জন্য প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন শিক্ষার্থীরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, দুর্ঘটনায় ১০-১২ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩-৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাদের বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছে।